‘কামদুনিতে খুনের চক্রান্ত’
মমতার অভিযোগ নিয়ে চিঠির জবাব এড়াল পুলিশ
কামদুনিতে তাঁকে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে প্রকাশ্য জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অভিযোগ করেছিলেন, সে ব্যাপারে জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে পুলিশকে চিঠি দিয়েছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা অমিতাভ চৌধুরী। যে হেতু মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পুলিশই তাঁকে ওই চক্রান্তের কথা বলেছে, তাই কলকাতা এবং রাজ্য দুই পুলিশকেই চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অমিতাভবাবুর অভিযোগ, তিনি যা জানতে চেয়েছিলেন, তা এড়িয়ে গিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। পুলিশ কর্তাদের অবশ্য দাবি, তথ্য জানার অধিকার আইনে এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
গত ১৮ জুন গাইঘাটায় এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, আগের দিন, অর্থাৎ ১৭ জুন কামদুনিতে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশের কাছ থেকেই তিনি ওই প্রাণনাশের চক্রান্তের কথা জানতে পেরেছেন বলে সভায় জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই বক্তব্য নিয়েই তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে পুলিশকে চিঠি দেন অমিতাভবাবু। গত ২২ জুন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে এ নিয়ে আলাদা করে দু’টি চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
কী জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে?
রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে পাঠানো চিঠিতে অমিতাভবাবু লিখেছিলেন,
এক) পুলিশ বলতে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন তা জানাতে অনুরোধ করছি।
দুই) এটা যদি কোনও ব্যক্তি বিশেষ হন, তা হলে তাঁর নাম ও পদ-সহ কোথা থেকে ওই ব্যক্তি খবরটি পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তার সূত্র জানানো হোক।
তিন) যদি তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) কোনও বিভাগ সম্পর্কে বলে থাকেন, তা হলে সেই বিভাগের নাম এবং তাদের ওই খবরের সূত্র জানানো হোক। তথ্য জানার অধিকার আইনের ৭(১) ধারার উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, একজন নাগরিকের জীবন সম্পর্কীয় ওই সব প্রশ্নের উত্তর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হোক।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে না হলেও গত ২ জুলাই অমিতাভবাবুর পাঠানো চিঠির জবাব দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (অর্গানাইজেশন) শিবশঙ্কর দত্ত। প্রথম প্রশ্নের জবাবে অমিতাভবাবুর উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘আপনি চাইছেন ব্যাখ্যা। কিন্তু তথ্য জানার অধিকার আইনে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই।’ দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রশ্নের জবাব এক সঙ্গেই দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, ‘এই প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে আমাদের অনুমানের সাহায্য নিতে হবে (দিস পাবলিক অথরিটি উইল বি রিকোয়ার্ড টু মেক অ্যাজাম্পসানস টু আনসার ইওর কোয়ারিজ)। কেন্দ্রীয় সরকারের এক নির্দেশিকা অনুযায়ী এই ধরনের প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায় না। তথ্য জানার অধিকার আইনের ৮ (১) (জি) ধারা মতে এই ধরনের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক নয়।’
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠানো চিঠিতে অমিতাভবাবু লিখেছিলেন,
এক) মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করেছেন কি না।
দুই) যদি করে থাকেন, তা হলে কোন থানায় করেছেন তার নাম-সহ জেনারেল ডায়েরি নম্বর, তারিখ ও সময় জানানো হোক।
তিন) তাঁর ওই অভিযোগের অনুলিপি দেওয়ার অনুরোধ করছি।
চার) ওই অভিযোগে নিযুক্ত তদন্তকারী অফিসারের নাম ও পদ জানানোর অনুরোধ করছি। এই চিঠির উত্তরও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়ার অনুরোধ জানান অমিতাভবাবু।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (প্রশাসন) প্রথম প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের কোনও থানায় ওই বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাই বাকি প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এই চিঠি পাওয়ার পর অমিতাভবাবুর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্রাণনাশের কথা জানালেও পুলিশের কাছে এ নিয়ে কার্যত কোনও তথ্যই নেই! কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার কথা বলে পুলিশ আসলে পুরো বিষয়টিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।”
এ ব্যাপারে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “কাল্পনিক তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। তথ্য জানার অধিকার আইনে যা জানতে চাওয়া হয়েছে, তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য ওঁদের (পুলিশের) কাছে নেই। কলকাতা পুলিশও জানিয়েছে, কোনও অভিযোগ করা হয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।”
আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য পুলিশের জবাবে অনুমান (অ্যাজাম্পসান) বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তথ্য জানার অধিকার আইনের জবাব দিতে অনুমানের প্রসঙ্গ আসছে কেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না।” এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের আইনজীবী নেত্রী তথা রাজ্যে আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “কাগজপত্র দেখিনি। কিছু বলা সম্ভব নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.