ছেলেটা যখন ব্যাট করতে নামছে, স্কোর বোর্ড দেখাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ১১৭-৯। অ্যান্ডারসন-ফিনদের সামনে স্রেফ উড়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। কত রানে এগিয়ে থাকা যাবে প্রথম ইনিংসে, এই প্রশ্নটাই তখন ঘোরাফেরা ইংল্যান্ড শিবিরে।
তার পরের দু’ঘণ্টায় অ্যাসেজের রূপকথা দেখল ট্রেন্টব্রিজ। দেখালেন ১৯ বছরের এক ছেলে অ্যাশটন আগার। ১১৭ রান থেকে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস যখন শেষ হল, স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ২৮০। অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট পড়ল যখন আগারের পুলটা ডিপ মিড উইকেটে ধরে ফেললেন সোয়ান। মাঠে থাকা ইংরেজ দর্শকদের কাছেও যেন ছন্দপতন হল। তবু ৯৮ রানে আউট হলেও সেঞ্চুরির সম্মানের চেয়ে তা কোনও অংশে কম থাকল না।
সেঞ্চুরি হল না ঠিকই, কিন্তু আগার ততক্ষণে অ্যাসেজের নায়ক হয়ে গিয়েছেন।
মাইকেল হোল্ডিং ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে বলছিলেন, “আগর ১১ নম্বরে নেমেছে কারণ ওর বয়স মাত্র ১৯। এ ছাড়া আর কোনও কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না।” সায় দিয়ে ইয়ান বোথামের উত্তর, “সত্যিই, ও মোটেই এগারো নম্বরের মতো ব্যাট করেনি।” |
দিনের শেষে গর্বিত মা-বাবার সঙ্গে আগার। ছবি: রয়টার্স |
সকালে অবশ্য পুরোটাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ব্যর্থতার কাহিনি। কাউন্টি ক্রিকেটে যখন রিকি পন্টিং সেঞ্চুরি করছেন, তখন তাঁর দেশের ব্যাটসম্যানরা ইংরেজ পেসারদের সুইং এবং পেসের সামনে একের পর এক ধরাশায়ী হচ্ছেন। ফিন দুটো উইকেট তোলার পর অ্যান্ডারসন তুলে নিলেন পাঁচটা। সোয়ানের ঝুলিতেও দু’উইকেট। চওড়া হচ্ছে কুকের হাসি।
ওই সময়ই ব্যাট করতে নামলেন আগার। গত কাল তাঁর হাতে ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপ তুলে দিয়েছেন ম্যাকগ্রা। কিন্তু অস্ট্রেলীয় পেসারদের দাপটে বেশি বল করার সুযোগ আসেনি আগারের কাছে। এক মেডেন-সহ সাত ওভারে দেন চব্বিশ রান। কিন্তু মাইকেল ক্লার্কদের ব্যাটিং ব্যর্থতা অযাচিত ভাবে একটা সুযোগ এনে দিল এই তরুণের সামনে।
শেষ উইকেট জুটিতে ১৬৩। আগারের ১০১ বলে ৯৮ রানের পাশাপাশি ফিল হিউজ করে গেলেন অপরাজিত ৮১। শেষ পর্যন্ত ব্রডের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ফিরলেন আগার।
মাত্র ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আগারের চাঞ্চল্যকর অভিষেকের পিছনে কোচ ড্যারেন লেম্যানের বড় ভূমিকা রয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আগারের খেলা দেখে তাঁর মধ্যে প্রতিভার স্ফূলিঙ্গ পেয়েছিলেন সেই সময় কুইন্সল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা লেম্যান। এবং বলেছেন, “আমার মতে ও অসাধারণ প্রতিভা।” আগার প্রাথমিক ভাবে দলের সঙ্গে এসেছিলেন অ্যাসেজের প্রথম দুই টেস্টের ‘ডেভেলাপমেন্ট ক্রিকেটার’ হিসাবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার প্রধানত ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তৈরি বলে অনকোরা নতুন বাঁ-হাতি স্পিনারকে নামিয়ে ফাটকা খেলার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া।
|
তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ট্রট-কুক।
অ্যাসেজের দ্বিতীয় দিনে। ছবি: এএফপি |
ট্রেন্টব্রিজ টেস্ট শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান জন ইনভেরারিটি, অন ট্যুর নির্বাচক ও উইকেটকিপিং কিংবদন্তি রডনি মার্শ এবং লেম্যান বাইশ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নাথান লিয়ঁর জায়গায় আগারকে প্রথম একাদশে চূড়ান্ত করে ফেলেন। তবে দলকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়, শত্রু শিবির যেন এই চমকের কথা ঘুণাক্ষরেও টের না পায়। এর পর বুধবার ট্রেন্টব্রিজে উনিশ বছরের নবাগতের অভিষেক ঘটে। এবং বাকিটা ইতিহাস।
আগার-হিউজের পার্টনারশিপটা বাদ দিলে অ্যাসেজের প্রথম টেস্টের প্রথম দু’দিন মোটামুটি পেসারদেরই। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও ধাক্কা দেন মিচেল স্টার্ক। পর পর দু’বলে রুট এবং ট্রটকে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। যদিও ট্রটের আউট নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্টার্কের বল ট্রটের পায়ে লাগলে আম্পায়ার প্রাথমিক ভাবে অস্ট্রেলীয়দের আবেদনে সাড়া দেননি। দেখে মনে হচ্ছিল, বল বুঝি ট্রটের ব্যাটে লেগেছে। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার সেই সিদ্ধান্ত নাকচ করে ট্রটকে আউট দিয়ে দেন। দিনের শেষে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০-২।
|
নাম: অ্যাশটন চার্লস আগার
জন্ম: ১৪ অক্টোবর ১৯৯৩,
মেলবোর্ন
উচ্চতা: ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি |
টেস্ট রেকর্ড
এগারো নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ স্কোর (অভিষেকে ৯৮)।
ভাঙলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিনো বেস্টের ৯৫ রানের
রেকর্ড (২০১২, বনাম ইংল্যান্ড)। দশম উইকেটে
সর্বোচ্চ ১৬৩ রানের পার্টনারশিপ। সঙ্গী ফিল হিউজ। |
• ঘরোয়া ক্রিকেট: শেফিল্ড শিল্ডে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক জানুয়ারি, ২০১৩।
• প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট: ম্যাচ ১০, উইকেট ৩১ (গড় ২৯.৩৮), রান ৩৩৬ (গড় ৩৩.৬০),
সেরা
বোলিং ৫-৬৫ (বনাম দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডিলেড),
সর্বোচ্চ রান ৭১ ন.আ. (বনাম তাসমানিয়া, পারথ)
• ক্রিকেট শিক্ষা: ব্রিসবেনে গ্রেগ চ্যাপেলের অধীনস্থ সেন্টার অব এক্সেলেন্স।
• পরিবার: মা সোনিয়া শ্রীলঙ্কান, বাবা জন আগার অস্ট্রেলীয়, ভিক্টোরিয়ার বাসিন্দা।
• রক্তে ক্রিকেট: আগারের দাদামশাই নলা হেওয়াউইসা ক্যান্ডির ধর্মরাজা কলেজের হয়ে ক্রিকেট
খেলতেন। তাঁর নামে ক্যান্ডিতে এখনও একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু রয়েছে।
বাবা জন
অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন। আগরের প্রথম কোচ বাবাই।
• আগের অভিজ্ঞতা: গত ভারত সফরে ০-৪ সিরিজ হারা অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে আগর
গিয়েছিলেন
নেট বোলার হিসাবে। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলে ১৩৪ রানে ৪ উইকেট পান।
এ
বারও ইংল্যান্ড
এসেছিলেন অ্যাসেজের প্রথম দুই টেস্টের জন্য ‘ডেভেলপমেন্ট প্লেয়ার’ হিসাবে। |
|