সিপিএমের কায়দায় ভোট করাল তৃণমূল
সুমন ঘোষ • গড়বেতা |
ভোট হল। কোনও তাপ-উত্তাপ ছাড়াই! উৎসাহ উদ্দীপনা নেই কেন? গড়বেতার পাথরিশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ থেকে কিছুটা দুরে তৃণমূলের জটলা থেকে এক জন উত্তরটা দিলেন, “এক তরফা ভোট হচ্ছে যে। উৎসাহ থাকবে কী করে।” বলেই দূরে সরে গেলেন। পরে জানা গেল তিনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী।
একতরফা ভোট কেন? কদমডিহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের সামনে গড়বেতা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের এক প্রার্থী দীপা লাহা জানালেন, “কেউ কঙ্কাল-কাণ্ডে ফেরার। কেউ ছোট আঙারিয়া মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সিপিএম লোক পাবে কোথায়!”
কথাটা আংশিক সত্য বটে। নানা মামলায় অভিযুক্ত থাকার কারণে হোক বা তৃণমূলের সন্ত্রাসের ভয়েগড়বেতার তপন ঘোষ, সুকুর আলিরা লুকিয়ে রয়েছেন। এন্তাজ আলি, তন্ময় ঘোষেরাও কেশপুরে নেই। নেই সুশান্ত ঘোষও। ফলে কেশপুর-গড়বেতায় রথের পরদিনই ভোটের উল্টোরথ দেখল মানুষ। ঠিক যে কায়দায় এক সময় ভোট করাত সিপিএম, একেবারে একই কায়দায় ভোট করাল তৃণমূল। কোনও ক্ষেত্রে আবার তার কাছে হার মানল সিপিএমের কৌশলও। |
চন্দ্রকোনা রোডে বন্ধ সিপিএম অফিস। —নিজস্ব চিত্র। |
সিপিএম কৌশল নিয়েছিল, সাত সকালেই ভোট দিয়ে দেওয়ার। অবশ্যই নেতারা নন। সমর্থকেরা যাবেন। নেতারা গেলে সতর্ক হয়ে যাবে তৃণমূল। অনুমান ছিল, প্রথমের দিকে তৃণমূল তৈরি হতে পারবে না। কিন্তু সেই অনুমান ভুল করে দিল তৃণমূল। কারণ, এতদিন সিপিএম যাদের দিয়ে এরকম করাত, তাদেরই একটা অংশ যে আজ তৃণমূলে। তাই ভোট দিতে গিয়ে সিপিএম সমর্থকরা দেখলেন, বুথ থেকে কিছুটা দূরেই জটলা। যে জটলা যেন ছাকনি। ছেঁকে নিচ্ছে কারা বুথে যাবেন, কারা যাবেন না। সাহসে ভর করে বুথের দিকে এগিয়ে যেতেই জটলা থেকে কয়েকজন এসে পথ আটকাচ্ছেন। শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘অনেক ভোট দিয়েছেন। আর দিতে হবে না। বিকেল ৪টের পর নিজেরাই দিয়ে দেব (অর্থাৎ ছাপ্পা দিয়ে দেব)।’ এটুকুই যথেষ্ট! আর সাহস পাননি সিপিএম সমর্থকেরা।
কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও একই ফর্মুলা তৃণমূলের। গড়বেতা থেকে কংগ্রেসের জেলা পরিষদ প্রার্থী মিঠু সরকার বলেন, “এজেন্টদের পর্যন্ত জোর করে বের করে দিচ্ছে। আমি প্রার্থী, আমাকেও বুথ থেকে বের করে দিচ্ছে। চারদিকে ছাপ্পা ভোট চলছে।” বুথের লাইনেও আবার ভোটার সেজে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মীরা। অনেক বুথে দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। |
গড়বেতার হুমগড়ে পুলিশের টহল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
কেশপুরে দু’চারটি ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সিপিএম সমর্থকরা। বাধা পেয়েছেন। রায়কুণ্ডু, বাজড়াকুণ্ডু, নাড়াজোল-সহ একাধিক বুথ থেকে সিপিএম ভোটারদের জোর করে বার করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চমীর ঘরছাড়া সিপিএম সমর্থকেরা গাড়ি ভাড়া করে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের জোর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি পুলিশ দিয়ে ১২ জনকে আটক করারও অভিযোগ উঠেছে। কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুইয়ের অভিযোগ, “কোনও অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ তাঁদের আটক করেন। কেবলমাত্র ভোট দেওয়া আটকাতেই সরকার এ ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করল! ৭৩টি বুথের মধ্যে ৩৩টি বুথে আবার ছাপ্পাও দিল!” জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
|
এক নজরে নির্বাচন
পশ্চিম মেদিনীপুর |
দীর্ঘ অপেক্ষা। ডেবরায়। |
• মোট বুথ: ৪৭৪৭
• রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ভোট শেষ: ৩৫১২ আসনে
• ভোটের হার: ৭৬.৫৩%
• পুনর্নির্বাচনের দাবি: সবংয়ের ১৫টি বুথে নির্বাচন কমিশন
জানিয়েছে,
অভিযোগ খতিয়ে দেখে ৩টি বুথে
পুনর্নির্বাচন করা হতে পারে। |
|
|
পড়ে জখম তৃণমূল সভাপতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
দীনেন রায়।
—ফাইল চিত্র |
বাথরুমে পড়ে গিয়ে জখম হলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি দীনেন রায়। তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দীনেনবাবুর মাথায় ১৪টি সেলাই করতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। স্বভাবতই অন্যান্য দিনের তুলনায় জেলা তৃণমূল সভাপতির ব্যস্ততা ছিল অনেকটাই বেশি। সকালে তাঁর দলীয় অফিসে যাওয়ার কথা ছিল। জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাথরুমে স্নান করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান তিনি। মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে। পরিবারের লোকেরাই জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। |
|