এক মন্ত্রীর বদলে আরেক!
আসার কথা ছিল ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের। এলাকায় ফলাও করে তার প্রচারও করা হয়েছিল। কিন্তু দলীয়-কর্মীদের হতাশ করে মদনবাবুর বদলে এলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। তাই দেখে হতাশ এক সমর্থক বলে উঠলেন, “কোথায় মদন মিত্র, আর কোথায় মলয় ঘটক! দিনটাই মাটি হয়ে গেল!” অবশ্য দলের জেলা সভাপতির বিতর্কিত মন্তব্য শুনে হাততালি দিতে দিতে তাঁদের সেই খামতি অনেকটাই দূর হতে দেখা গেল। তা দলের নেতার ওই সব মন্তব্য যতই বিরোধীদের সমোলোচনার মুখে পড়ুক না কেন!
বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের সোঁতশালে তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারসভায় জনসংখ্যা দেখে কিছুটা হতাশই হলেন তৃণমূলের নেতারা। স্থানীয় নেতা আনারুল হক অবশ্য নিজের বক্তৃতায় খানিকটা ‘ম্যানেজ’ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। বললেন, “আজ থেকে রোজা শুরু হওয়ায় এলাকার লোকজন জনসভায় যোগ দিতে পারেননি।” মেরেকেটে জনা সাতশো লোক কম হলে কী হবে! তাতে অবশ্য উৎসাহে ভাটা পড়েনি দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সিপিএম ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আগাগোড়া বিষোদগার চালিয়ে গেলেন। পরে নাম না করেই এলাকার এক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতাকে অভিযুক্ত করে বললেন, “মহম্মদবাজারের এক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দীর্ঘদিন জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েক কোটি টাকা চুরি করেছেন।” |
তারপরেই তাঁর হুমকি, “সব দেখা হবে। যাঁরা চুরি করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা সভাপতি ছাড়েননি আদিবাসীদের সংগঠন গাঁওতাকেও। তাঁর অভিযোগ, “গাঁওতারা টাকার জন্যে গাঁওতাগিরি করছেন।” পরে মল্লারপুরে গিয়ে সুর আরও চড়ে যায় তৃণমূলের এই নেতার। সেখানে প্রকাশ্যে সিপিএমকর্মীদের উপরে হামলা করতে দলীয় কর্মীদের প্ররোচনা দিতে শোনা যায় তাঁকে।
অবশ্য প্রচারসভায় জেলা সভাপতির ঢঙে বিরোধীদের সমালোচনার রাস্তায় যাননি দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বরং গত দু’ বছরে রাজ্যে ও জেলায় উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করেন। একই কাজ করেন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও। পরে বলতে শুরু করেন মলয়বাবু। মুসলিম ভোটারদের কথা মাথায় রেখে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, “বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ে ১১ শতাংশ মুসলিম সরকারি চাকরি করতেন। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে।”
বিতর্কিত মন্তব্য করে বারবার খবরের শিরোনামে আসা তৃণমূলের জেলা সভাপতির বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে জেলা সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অনুব্রতবাবুর ওই বক্তব্যের পরে প্রশাসনের তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” একই দাবি জানানোর পাশাপাশি কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক সঞ্জয় অধিকারী বলেন, “অনুব্রতবাবু শালীনতার শেষ সীমা ছাড়িয়েছেন। তৃণমূলের এই নেতা যে ভাষায় আমাদের দল ও নেতাদের গালিগালাজ করেছেন, তাকে নিন্দা করারও কোনও ভাষা নেই।” |