বাঁকুড়া মোড় রেল সড়ক সেতু |
সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার, ঝুঁকির চলাচল সেতুতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায় চকচকে উড়ালপুল। আলো জ্বলে না। আর তাই দুর্গাপুরের বাঁকুড়া মোড়ের রেল-সড়ক সেতুতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর। পূর্ত দফতর জানায়, আলোর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পুরসভার। পুরসভার পক্ষ থেকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপুর শহরের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক নবনির্মিত এই রেল-সড়ক সেতুটি হয়েই গিয়েছে। এটিই উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে অন্যতম প্রধান যোগাযোগকারী রাস্তা। দিনে বেশ কয়েক হাজার পণ্যবাহী গাড়ি ও বাস চলাচল করে এই রাস্তায়। দিল্লীগামী রেললাইনের উপর দিয়েই চলে গিয়েছে এই রাস্তা। ২০০০ সাল নাগাদ একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দিনে গড়ে ১৩৪ বার এই রেলগেটটি বন্ধ করতে হত। সমস্যার সমাধানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে রেল দফতরের সহায়তায় এই সেতুটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৭ সালের এপ্রিলে রেল দফতর তা অনুমোদন করে। এ’বছরের প্রথম দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। খরচ হয় ১৬ কোটি ৩২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। তার মধ্যে রেল ৬ কোটি ৯৬ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা দেয়। বাকি ৯ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা দেয় রাজ্য সরকার। তৈরি হয় প্রায় ৫৩ মিটার দীর্ঘ ও ১২ মিটার চওড়া রাস্তাটি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পানাগড়ের মাটি উৎসবের মঞ্চ থেকেই দুর্গাপুরের এই সেতুটির উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
আগের গাড়ির আলো অনুসরণ করেই ছোটে পিছনের গাড়ি। |
শহরবাসীর অভিযোগ, শহরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য এটি অন্যতম প্রধান রাস্তা হলেও সেতুতে কোনও ফুটপাথ তৈরি হয়নি। ফলে রাস্তা দিয়েই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় বাসিন্দাদের। দিনের আলোয় যাও বা কোনওরকমে যাতায়াত করা যায়, সন্ধ্যায় তাও আর সম্ভব হয় না আলো না থাকায়। তখন পথচারীদের ভরসা গাড়ির ‘হেডলাইট’।
স্থানীয় বাসিন্দা হেমন্ত সাউ, নগেশ সাউ’রা বলেন, “রাতে প্রাণ হাতে নিয়ে হেঁটে সেতু পেরোতে হয়। সেতু চালু হওয়ার পরে রেললাইন পেরনোর ঝুঁকি নিতে হবে না ভেবে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু আলোর ব্যবস্থা না করলে তো কোনও লাভই নেই।” সেতু দিয়ে প্রতিদিন রাতে দু’বার গাড়ি নিয়ে দুর্গাপুর থেকে বড়জোড়া যান রমেশ পাল। তিনি বলেন, “সেতুটি মাঝ বরাবর বেশ উঁচু। অন্ধকারে হেডলাইট ভরসা করে গাড়ি চালানোও ঝুঁকির। উল্টো দিক থেকে হঠাৎ উঠে আসা গাড়ির আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তাই সেতুতে আলো জ্বললে গাড়ি চালাতেও সুবিধা হবে।” |
|
ব্যবহার হয় না বাতিস্তম্ভ। |
ফেব্রুয়ারিতে মাটিু উৎসবের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সেতু উদ্বোধন করায় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, রেলকে কিছু না জানিয়েই মুখ্যমন্ত্রী রেল-সড়ক সেতু উদ্বোধন করেছেন। ফের নতুন করে সেতু উদ্বোধন করার কথা বলেছিলেন তিনি। তবে তা আর হয়নি। কিন্তু উদ্বোধনের পর চারমাস কেটে গেলেও সেতুটিতে আলোর স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় ক্ষুব্ধ শহরবাসী। তাঁদের অভিযোগ, সেতুর পাশে চারটি উঁচু বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক পর থেকেই সেগুলি নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী বাস্তুকার এস দাস জানান, শহরের রাস্তাঘাটে আলোর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পুরসভার। সেতুটি শহরের মাঝে অবস্থিত। তাই সেখানে আলোর ব্যবস্থা পুরসভাকেই করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (পূর্ত) প্রভাত চট্টোপাধ্যায়।
|
ছবি: বিকাশ মশান। |
|