ভুটান এবং সিকিম পাহাড়ে টানা বৃষ্টি চলতে থাকায়, উত্তরবঙ্গের ৫টি নদীকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সেচ দফতর। তিস্তা নদীতে গত আট দিন ধরে লাল সর্তকতা জারি রয়েছে। বিপদ সঙ্কেত রয়েছে কালজানি, জলঢাকা নদীতেও। ভুটান পাহাড়ের টানা বৃষ্টিতে ডুয়ার্সের লিস এবং ঘিস নদীর জলও বাড়ছে। যদিও তিস্তা, সংকোশ, রায়ডাক, কালজানি, লিস-ঘিস নদীকে ঘিরে বাড়তি সর্তকতা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের সব নদীতেই জল কখনও বেড়ে বিপদসীমা ছুঁয়েছে। যদিও মূলত ৫টি নদীকে ঘিরে বাড়তি সর্তক রয়েছে সেচ দফতর তথা উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন। ওই নদীগুলিতে বাড়তি সর্তকতার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সেচ মন্ত্রীর দফতর থেকে। বুধবার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, দার্জিলিং জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের বিচ্ছিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরদুয়ারে ১০৪ মিলিমিটার, মাথাভাঙায় ৮৭ মিলিমিটার, তুফানগঞ্জে ১৫৬ মিলিমিটার, শিলিগুড়িতে ৭০ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ৯৩ মিলিমিটার, কোচবিহারে ১২৬ মিলিমিটার, মালবাজারে ১৩৩ মিলিমিটার, ময়নাগুড়িতে ১১০ মিলিমিটার, বানারহাটে ২১১ মিলিমিটার ও হাসিমারায় ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। |
রাতের অন্ধকারে সার্চ লাইট জ্বেলে নদীতে নজরদারি চালাবেন সেচ কর্তারা। নদীগুলি সম্পর্কে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের দফতরের কর্তাদের রাত ১১টায় সর্বশেষ বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে নদী পরিস্থিতি রিপোর্ট রাজ্য কন্ট্রোল রুমে পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে টানা বৃষ্টির পরে তিস্তা, সংকোশ সহ অনান্য নদীগুলিতে ক্রমাগত জল বাড়তে থাকার পরে গত সপ্তাহে মন্ত্রীর দফতর থেকে এই নির্দেশ এসছে বলে জানা গিয়েছে।
কেন এই বিশেষ নির্দেশ?
সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায় বৃষ্টি না হলেও, সিকিম বা ভুটান পাহাড়ের হঠাৎ বৃষ্টিতে যে কোনও মুহূর্তে এই নদীগুলিতে জল বাড়তে পারে। ভুটান পাহাড়ে কতটা বৃষ্টি হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও তথ্য সেচ দফতরের কাছে পৌঁছোয় না। সে কারণেই নদীর জল বাড়ার গতিপ্রকৃতির উপর টানা নজরদারি ছাড়া, ডুয়ার্সের বেশিরভাগ নদীতেই জল বাড়ার পুর্বাভাস পাওয়ার বিকল্প পথ নেই বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। |
করলার জলে প্লাবিত জলপাইগুড়ি
২৫ নম্বর ওয়ার্ড নেতাজিপাড়া। |
ময়নাগুড়িতে বৃষ্টির জলে থইথই জমিতে
শোলার ভেলায় দুই বালক। |
|
গত আটদিন ধরে তিস্তা নদীতে টানা লাল সর্তকতা জারি রয়েছে। সিকিমে টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তায় জল বেড়েই চলেছে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত লাল সর্তকতা রয়েছে। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ লাগোয়া এলাকাতেও তিস্তা নদী বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে। মালবাজারের মোয়ামারি এলাকায় তিস্তা নদী গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ভুটান পাহাড়েও টানা বৃষ্টি চলতে থাকায় জল বেড়েছে সংকোশ নদীতেও। আলিপুরদুয়ার মহকুমাতে সংকোশের অন্তত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় পাড় ভাঙা শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তেমনই রায়ডাক নদী পাড় ভেঙে কোচবিহার এবং ডুয়ার্সের বিভিন্ন জনপদকে জলমগ্ন করে দিয়েছে। নদীর জল ঢুকে পড়েছে তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকাতেও। ঘিস নদীর জল বেড়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া গ্রাম এলাকা প্লাবিত করেছে। সবকটি নদীই জনপদকে প্লাবিত করলেও সেচ দফতর উদ্বিগ্ন হঠাৎ জল বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙন নিয়ে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার অন্তত ৮০ কিলোমিটার নদী বাঁধ এবং ১২৫ কিলোমিটার নদী লাগোয়া অসংরক্ষিত এলাকা (যেখানে বাঁধ নেই) ভাঙন শুরু হয়েছে। সে কারণেই ৫টি নদী ঘিরে বিশেষ সর্তকতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |
কোচবিহারের টাকাগছের দর্জিপাড়ায় ঢুকেছে তোর্সার জল। |
রাজ্যের সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষার আগে বন্যা ঠেকানোর যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সে কারণে এবারে তুলনামুলক ক্ষয়-ক্ষতি কম। তবে এক টানা বৃষ্টি যে কোনও সময়ে ছবিটা বদলে দিতে পারে। বিশেষত ভুটানে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে অথবা পুর্বাভাস তার কোনও তথ্যই আমাদের কাছে আসে না। সে কারণে পাহাড় থেকে আসা প্রতিটি নদীতে ঘিরে বাড়তি সর্তকতা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। দিনের বেলায়তো বটেই। রাতেও নদীতে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন অধীক্ষক বাস্তুকার পদমর্যাদার আধিকারিককে শুধুমাত্র সিকিম এবং ভুটানের বৃষ্টির তথ্য জানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
|