প্রবল বর্ষণ, বন্যা পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে
প্রবল বর্ষণের জেরে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে জলে ডুবে ২ জনের মৃত্যুর খবর পৌঁছেছে প্রশাসনের কাছে। শিলিগুড়িতে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার দেহ পঞ্চনই নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আলিপুরদুয়ারে সঞ্জয় নদীতে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছেন সুরজ মুন্ডা নামে এক যুবক। হলদিবাড়িতে এক মহিলা জলে পড়ে জখম হয়েছেন। শিলিগুড়ি পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জলপাইগুড়ি পুরসভার মহামায়াপাড়া, পান্ডাপাড়া, কংগ্রেসপাড়ায়র অনেক অংশ জলমগ্ন হয়ে যায়। জলপাইগুড়ির টাউন স্টেশন থেকে কদমতলা যাওয়ার রাস্তা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে ছিল। ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকাও এদিন সকাল থেকে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। আলিপুরদুয়ার পুরসভার কিছু এলাকাও এদিন দিনভর জলমগ্ন ছিল।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “উত্তরবঙ্গের বন্য্য পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজখবর নিয়েছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান এবং সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি।” তিনি জানান, আলিপুরদুয়ার, ১ এবং ২ নম্বর ব্লক, কুমারগ্রাম, কোচবিহারের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। দফথরের মুখ্য বাস্তুকার এবং সমস্ত আধিকারিকদের এলাকায় গিয়ে যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় পরিস্থিতি সামলাতে বলা হয়েছে। ওই কাজে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নদফতরের প্রধান বাস্তুকার কোচবিহারে আছেন, যুগ্ম সচিবকে মালদহে পাঠানো হয়েছে।
জলমগ্ন আলিপুরদুয়ার পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড। হলদিবাড়ির দেওয়ানগঞ্জের একটি স্কুল চত্বর।
মন্ত্রী জানান, শিলিগুড়ি শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে হাইড্রেনের উপর ঘরবাড়ি তৈরির জন্য জল বার হতে না পেরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেবক রোডে সতী মন্দিরের কাছে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় বর্ষার জল জমে গিয়েছে। এ দিন শিলিগুড়ি পুর কমিশনারকে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনও উত্তর পাননি বলে অভিযোগ করেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, পুর নিগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তিনি দার্জিলিং জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিস্থিতি সামলাতে এবং ত্রাণ ব্যবস্থার জন্য তাঁদের বলেছেন। পুরসভার তরফে ভুল প্রকল্প দেওয়ায় শিলিগুড়ি শহরের শক্তিগড় এলাকার নিকাশি তৈরির কাজ সময় মতো করা যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে মালবাজার মহকুমার ক্রান্তি এলাকার তিস্তা সংলগ্ন মৌয়ামারির চর জলমগ্ন হয়ে প্রায় ২০০টি পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাকামিস্ত্রি এলাকাতেও জলবন্দি হয়ে পড়েছে ২০টি পরিবার। জল ঢুকেছে ৩১নং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন ওদলাবাড়ি পাকের্। ডুয়ার্সের শামুকতলার বস্তি কুমারগ্রামের ভল্কা, নিমাই পাড়া, পূর্ব চকচকা এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। নিমাই পাড়া এলাকায় সংকোশ নদীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে।
কোচবিহারের টাকাগছের রাজারহাটে
যাতায়াতের ভরসা কলার ভেলা।
ফালাকাটার প্রমোদনগর গ্রামে
ডুডুয়া নদীর ভাঙন।
এদিন নদী ভাঙন খতিয়ে দেখতে এলাকায় সেচ দফতরের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে যায়। ভাটিবাড়ি এলাকায় দুটি ত্রান শিবিরে প্রায় চারশো বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
ইসলামপুরেরর সাতভিটা, পণ্ডিতপোতা, মরাগতি, গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়া, পাচরা, চোপড়া, করণদিঘির এলাকার বেশ কিছু অংশ এদিন জলমগ্ন ছিল। গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়া এলাকার একটি জলাশয়ে ডুবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কিশোর মহম্মদ মমতাজের খোঁজে এদিনও তল্লাশি চলেছে। ইসলামপুর থানার ধনতলা বাইপাস এলাকার জলবন্দি বাসিন্দারা গাইসাল পঞ্চায়েত অফিসের আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। রায়গঞ্জ ব্লকের ভাটোল, জগদীশপুর, শীতগ্রাম ও বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা এদিনও জলমগ্ন ছিল। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার শতাধিক পরিবারকে উঁচু জায়গা ও বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ দিন ময়নাগুড়ি ব্লকের জলমগ্ন বর্মনপাড়া ও সরকারপাড়ার বাসিন্দাদের এবং হেলাপাকড়ির মতিয়ার চর এলাকার বাসিন্দাদের চর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বলা হয়। কেউই এলাকা ছেড়ে সেখানে যাননি। ময়নাগুড়ি শহরের বিস্তীর্ণ এলাকাও এদিন জলবন্দি হয়ে পড়ে। নদীর জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হলদিবাড়ি ব্লকের দেওয়ানগঞ্জ, বক্সিগঞ্জ, হেমকুমারী এবং দক্ষিণ বড়হলদিবাড়ি এলাকায়। বুড়িতিস্তা নদীর জল ঢুকে পড়েছে দেওয়ানগঞ্জ এলাকার বাড়িগুলিতেও। দেওয়ানগঞ্জ হাইস্কুলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় এদিন ক্লাস হয়নি। হেমকুমারির স্বামীরাবস এবং দক্ষিণ বড়হলদিবাড়ির খালপাড়াতে বেশ কয়েকটি পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে খবর এসেছে।
জলমগ্ন শিলিগুড়ি পুরসভার
অশোকনগর এলাকা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদী সংলগ্ন বিবেকানন্দ পল্লি
এলাকায় জল ঢুকেছে। ছবি: সন্দীপ পাল।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকে প্রায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। কোচবিহার সদর মহকুমার দুর্গতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই মহকুমার পাতলাখাওয়া, মধুপুর, খোল্টা, মরিচবাড়ি, আমবাড়ি, মালতিগুড়ি, গোপালপুর, ডাউয়াগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায় তোর্সার জল ঢুকে মঙ্গলবার বহু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। মাথভাঙা ১ ব্লকের কুর্শামারি, জোরপাটকি, বড়খলিসামারির বিস্তীর্ণ এলাকা নেন্দাই ও ধরলা নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। ১৫ টি ত্রাণ শিবিরে এক হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন বলে জানা গিয়েছে। বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এ দিন তুফানগঞ্জের বিভিন্ন দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। এদিন তুফানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের তরফে ত্রান শিবিরে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়।
—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.