প্রবল বর্ষণের জেরে দার্জিলিং, সিকিমের পাহাড়ি এলাকা সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন সোমবারও কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে যায়। পাহাড়ের কয়েকটি ধসপ্রবণ এলাকায় বিপদের আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। সমতলে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নানা এলাকায় শস্য ও সবজি খেতে জল জমেছে। জল না কমলে ঝিঙে ও পটলের ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে। তিস্তা নদীর দোমহনি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত এলাকায় লাল সর্তকতা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে। |
কোচবিহারের শীতলখুচিতে টানা বর্ষণে বটগাছ উপড়ে পড়ায় বর্ণালী বর্মন (১০) নামে একটি বালিকার মৃত্যু হয়েছে। তার বাবা-মা দুজনেই জখম হয়েছেন। তাঁদের দুজনকে মাথাভাঙা ও কোচবিহার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন যান। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে মাটি ধসে প্রাচীন বটগাছটি উপড়ে বাড়িটির উপরে পড়ে। শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ওই পরিবারকে সাহায্য করা হচ্ছে।” উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের গোয়ালপোখর পাঞ্জিপাড়ায় নিচু এলাকায় জমা জলে খেলতে গিয়ে মহম্মদ মনতাজ (১৬) নামে একটি কিশোর ডুবে গিয়েছে। তার হদিস মেলেনি। ডুয়ার্সে আলিপুরদুয়ারের কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় সেখানে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার ২ ও কুমারগ্রাম ব্লকের বেশ কিছু এলাকার রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। কিছু রাস্তা জলের তোড়ে ভেঙেও পড়ে। রায়ডাক, সঙ্কোশ ও ধারসি নদীর ভাঙন চলছেই। শামুকতলা বস্তি কুমারগ্রামের ভল্কা, নিমাইপাড়া, পূর্ব চকচকা আতঙ্কে। আলিপুরদুয়ার ২ বিডিও সজল তামাং বলেন, ব্লকে ১২টি শিবির খোলা হয়। |
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সিকিমের লাচুং-এর কাছে ধস নামায় সেখানকার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কালিম্পঙের রাস্তায় বেশ কয়েকটি ধসপ্রবণ এলাকায় ৩১ (এ) জাতীয় সড়কের উপরে মাঝেমধ্যেই মাটি ও পাথর গড়িয়ে পড়ছে। সীমান্ত সড়ক কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের নজরদারি চলছে। দ্রুত মাটি-পাথর সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ দিন জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি পুরসভার চারটি ওয়ার্ড। সোমবার বিকেল পর্যন্ত জলবন্দি থাকতে হয়েছে পান্ডাপাড়া, মহামায়া পাড়া, অশোকনগরের বাসিন্দাদের। এ দিন সকালে শহরে রায়কতপাড়া থেকে শুরু করে জয়ন্তীপাড়া, হাসপাতাল পাড়া, নতূনপাড়ার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারমান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “সকালের দিকে বেশ কিছু ওয়ার্ডে জল জমে যায়। পুর কর্মীরা জল বের করার কাজ করেন। কিছু এলাকায় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোরও ব্যবস্থা করা হয়।” |
জলপাইগুড়ির সুকান্তপল্লি এলাকায় সন্দীপ পালের তোলা ছবি। |
তুফানগঞ্জ শহরে এ দিন হেরিটেজ রোডের উপর দিয়ে হাঁটু জল বইছে। জলের তোড়ে কোথাও পিচ রাস্তা উধাও, কোথাও কোমর জল। কোন বাড়ির উঠোতে এক মানুষ জল। রাতে সবাই জড়ো হয়েছিল খানিকটা উঁচু জায়গা পাকা সড়কের উপর। ঘুম নেই, খাওয়া নেই। এ ভাবে রাত কাটিয়েছেন তুফানগঞ্জ মহকুমার নাটাবাড়ির দ্বারকামারি। গদাধরের জল কমলে তারা বাড়ি ফেরেন। প্রশাসনের হিসাবে ৫০ হাজার বাসিন্দা বন্যা কবলিত হয়েছেন এখানে। ৫ হাজার বাসিন্দাকে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের বিডিও তাপস সিংহ রায় জানান, ত্রাণ সরবরাহের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ দিন বন্যা কবলিত লোকা পরিদর্শনে যান নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বন্যা কবলিত বাসিন্দাদের সাহায্য করতে ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। |
|
|
জলমগ্ন জলপাইগুড়ির মহামায়াপাড়া। —নিজস্ব চিত্র। |
জল বেড়েছে শিলিগুড়ির মহানন্দা নদীতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
|
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পশ্চিম পানিশাঢ়ায়কাল জানি নদীর জলের তোড়ে ৩০ মিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। তাতে বামনিরায়, অনিল রায়, রঞ্জিত দাসদের বাড়ির সামনে নদী ফুঁসছে। ভুচুংমারিতে নদী ভেঙে ৫০ মিটার এলাকা। দুটি বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়েছে। তুফানগঞ্জে চিলাখানা হাই স্কুল এবং আরেকটি স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় নৃপেন দাস, রুহি দাস, বিপিন রায়, চন্দন আর্যদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। দ্বারিকামারির তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মলিনা দাসের বাড়িতেও জল ঢুকেছে। বিপিনবাবু বলেন, “স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে রাতভর রাস্তায় কাটিয়েছি। সারা রাত খাওয়া জোটেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুকনো মুড়ি ছাড়া এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও ত্রাণ তাঁরা হাতে পাননি। বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেও। পদযাত্রা ও সাইকেল মিছিল, সভা থমকে যাচ্ছে। বালুরঘাটের বাম নেত্রী মিনতি ঘোষ জানান, শনিবার কুশমণ্ডি ব্লকের চারটি সভার আয়োজন হলেও বৃষ্টির জন্য দুটি বাতিল হয়। |