বাঁধ তৈরির জন্য কেউবা জমি দিয়েছেন এক দশক আগে। কেইবা দিয়েছেন তিন দশক আগে। কিন্তু কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের বীরনগর ১ ও ২, লক্ষীপুর, রাজনগর গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই জমি উপর ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ যে দশটি বাঁধ তৈরি করেছিল, গঙ্গা ভাঙনে ইতিমধ্যে আটটি বাঁধই গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। এখন শুধুমাত্র শিমূলতলা থেকে বীরনগর চার কিলোমিটার ও বীরনগর থেকে রাজনগর তিন কিলোমিটার দুইটি বাঁধ রয়েছে।
এলাকার জমিদাতারা জানান, ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আগেই বেশ কিছু বাসিন্দা মারাও গিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের টাকা জন্য ফরাক্কা ব্যরেজ প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ ও মালদহ জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে ঘুরতে ঘুরতে অনেকেরই কাগজপত্র হারিয়ে গিয়েছে। যে জমিতে চাষ করে সংসার সংসার তা চলে যাওয়ায় কেউ দিনমজুরি, কেউ ভ্যান রিকশা চালাচ্ছেন। কেউবা ভিন রাজ্যে কাজের জন্য গিয়েছেন। ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ কুমার সিংহ। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক বাঁধ তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের বকেয়া টাকা যেভাবে বরাদ্দ করছে, সেইভাবে টাকা মালদহ জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখনও বহু কৃষক জমি দিয়েও ক্ষতিপূরনের টাকা পাননি ঠিকই। টাকা না এলে আমরা কী করে দেব!”
বীরনগর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পলাশগাছি , সুলতানগঞ্জের জমিদাতা লিয়াকত আলি, সিরাজ শেখ, আবদুল মিঁয়ারা জানান, ফরাক্কা বাঁধ না হলে আমরা গঙ্গায় ভেসে যাব শুনে কেউ জমি দিতে আপত্তি করিনি। ১০ বিঘা থেকে ৫০ বিঘা অবধি অনেকে জমি দিয়েছিলেন। বাঁধ তৈরিও হল। আবার তা গঙ্গায় তলিয়েও গিয়েছে। কিন্তু আমরা জমির টাকা এখন পেলাম না। শিমূলতলা গ্রামের আবদুল জব্বর, মালেক মিঁয়ারা জানান, আশির দশকে বাঁধ তৈরির জন্য তিন হাজার টাকা শতক হিসাবে জমি নেওয়া হয়। টাকা আজও মেলেনি। বীরনগর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুরের মনোজ সরকার, দেবীলাল মন্ডলরা বলেন, “২০০৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম। ২০১১ সালে হাইকোর্ট ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার পরে কিছু কৃষক ক্ষতিপূরনের টাকা পেয়েছিলেন। অনেকেই পাননি।”
জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক সঞ্জীব চাকি বলেন, “ফরাক্কা ব্যরেজ কর্তৃপক্ষ যা টাকা দিয়েছে সব বিলি করা হয়েছে। এখনও কতজন টাকা পাবেন তা ফরক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।” বৈষ্ণবনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি আসনে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীকে অনুরোধ করেছি। আশা করছি, আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১৯৭৫ সাল থেকে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট কতৃর্পক্ষ জমি অধিগ্রহণ শুরু করে প্রথম বাঁধ তৈরি করেছিল। ১৯৯৬ সালে শেষ দশম বাঁধের কাজ শেষ হয়। এরমধ্যে ভাঙনে এক থেকে অষ্টম নম্বর বাঁধ গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। বাঁধের জন্য মোট ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সেইসময় জমিদাতাদের মাত্র ২০ শতাংশ টাকা দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন। প্রায় ৮ হাজার কৃষকের কাছে থেকে জমি নেওয়া হয়েছিল। তিন হাজার কৃষক জমির দাম পেয়েছেন। প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক জমির ৮০ শতাংশ দাম পাননি। জমি অধিগ্রহণের সময় তিন হাজার টাকা এক শতক জমির দাম ঠিক হয়েছিল। |