চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এডস আক্রান্ত এক তরুণীকে শিলিগুড়ির খালপাড়ার একটি নার্সিংহোম থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন তাঁর লোকেরা। বুধবার রোগিণীকে ওই নার্সিংহোম আরোগ্য নিকেতন থেকে মাটিগাড়ায় অপর একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগিণী তথা যৌনকর্মী ওই তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছে শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের অভিযোগ, টিবিতে আক্রান্ত ওই তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার আরোগ্য নিকেতন নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ‘রিকভারি ইউনিট’-এ তাঁকে রাখা হয়েছিল। তখন থেকেই নার্স আয়ারা তাঁকে ছুতে চাইছিল না। ওষুধ দেওয়া থেকে অন্য পরিষেবার কাজ ঠিক মতো করছিলেন না। তাঁর পাশে থাকতেন না তাঁদের কেউ। নার্সিংহোমের ম্যানেজারকে বললে তাঁর ‘কিছু করার নেই’ জানিয়েদেন। এমনকী গলায় সংক্রমণের কারণে পুঁজ জমে যাওয়ায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বলে চিকিৎসক জানান। কর্তৃপক্ষ রোগিণীর জন্য ওটি ব্যবহার করতে দেননি বলে অভিযোগ। চিকিৎসক সাহায্য করলেও ম্যানেজার, নার্স, আয়াদের অসহযোগিতায় ওই তরুণীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
এডস রোগীদের যাতে কোনও ভাবেই ফেরানো না হয়, চিকিৎসায় যাতে কোনও গাফিলতি না হয় সে জন্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ থাকলেও এ ক্ষেত্রে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাইছে না বলে অভিযোগ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দার্জিলিঙে থাকায় টেলিফোনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা তাঁকে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে রোগিণীকে সাধারণ শয্যায় স্থানান্তরিত করা হয়। এর পর আলাদা ব্যবস্থা করার কথা বলে একটি পরিত্যক্ত ঘরে তাঁকে রাখা হয়। তার একাংশে সংস্কার কাজ চলছিল। তা নিয়ে বলতে গেলে রোগিণীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে কর্তৃপক্ষ চাপ দেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করেছে নার্সিংহোমের ম্যানেজার নীরজ কুমার চৌরাশিয়া। তিনি বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ ঠিক নয়। রিকভারি ইউনিটে রাখার পর খরচ বেশি হচ্ছে বলে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়। কেবিনে প্রতিদিন অনেক খরচ। তারা কম খরতে রাখার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন।” নার্স, আয়াদের একাংশের তরফে রোগীকে ছুঁতে না চাওয়া, পরিষেবা দিতে গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে তিনি অবশ্য সদুত্তর দিতে পারেননি। নার্সিংহোমের অন্যতম কর্ণধার সজ্জন কুমার ডালমিয়া বলেন, “রোগিণীকে পরিষেবা দেওয়া হবে না এটা হতে পারে না। বাইরে ছিলাম। এ দিন ফিরেছি। কী সমস্যা হয়েছিল খোঁজ নিয়ে দেখছি।” দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানান, এ ধরনের অভিযোগ না ওঠাই কাম্য। নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে আগে তাদের যে সব বিষয় মেনে চলার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যেও এই বিষয়টিও ছিল। তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক কৌস্তভ দত্ত জানান, টিবি আক্রান্ত ওই তরুণীর গলার একাংশ ফুলে গিয়েছে। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। অভিযোগ, আলাদা জায়গায় রোগীকে রাখার পর নার্স, আয়াদের ঠিক মতো দেখতে অনুরোধ করা হয়। সারা দিনে রোগী বার তিনেক শয্যায় প্রস্রাব করেছেন। নার্স আয়ারা তাঁর শয্যায় চাদর বা পোশাক বদলে পর্যন্ত দেননি। কেবিনে রাখতে গেলে ৬৯০ থেকে ৮০০ টাকা করে প্রতিদিনের চার্জ নেওয়ার কথা জানানো হয়। ওই ফি নেওয়ার পরেও খাবার বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা মিলবে না বলে জানানো হয়। কৌস্তভবাবুর দাবি, শহরে উন্নত মানের নার্সিংহোমে ওই টাকায় আরও ভাল পরিষেবা মেলে। তাই বাধ্য হয়ে শেষপর্যন্ত মাটিগাড়ার উপনগরীর একটি নার্সিংহোমে রোগিণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছেন। আপাতত ভর্তি করার দরকার নেই বলে জানিয়েছেন। নির্ধারিত দিনে রোগিণীকে আসতে বলেছেন। প্রয়োজনে তারা অস্ত্রোপচার থেকে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে ওই সদস্যরা জানিয়েছেন। এর পরেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের এক জনের বাড়িতে তাঁকে রাখা হয়েছে। |