হাসপাতালের এক চিকিৎসক পরীক্ষা করে বললেন আর বেঁচে নেই। বাড়ি ফিরে আসার পরে মৃতের চোখের পাতা নড়েছে বলে দাবি করে পরিবারের লোকেরা নিয়ে গেলেন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে। তিনি জানান, দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। সেখান থেকে ফের হাসপাতালে। এ বার হাসপাতালের সুপার পরীক্ষা করে জানালেন অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে রোগীর। এই অবস্থায় প্রথম চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বুধবার হুলুস্থূল কাণ্ড বেধে যায় বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। চলে বিক্ষোভ, ভাঙচুর। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে বাড়ির সামনে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার সময় পুকুরে পড়ে যায় বছর দুয়েকের দেবকুমার হালদার। সঙ্গীদের চিৎকারে তা জানতে পেরে তাকে জল থেকে তুলে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক উজ্জ্বল বসাক দেবকুমারকে
|
মৃত দেবকুমার হালদার।
—নিজস্ব চিত্র। |
পরীক্ষা করার পরে সে মারা গিয়েছে বলে জানান। এর পরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরিবারের দাবি, জল বের করার জন্য বাড়িতে তার বুকে-পিঠে চাপাচাপি করার সময় দেবকুমারের চোখের পাতা নড়ে ওঠে। তা দেখে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক শ্রীপদ দেবনাথকে ডেকে আনেন। তিনি দেবকুমারকে পরীক্ষা করে জানান সে বেঁচে আছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে সুস্থ হয়ে যেতে পারে। এর পরে দেবকুমারকে ফের বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। ইতিমধ্যে রটে যায়, বেঁচে থাকা শিশুকে ঠিকম পরীক্ষা না করে তাকে মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক। এর ফলে এলাকায় হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। এ দিকে হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল দেবকুমারকে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন সে মারা গিয়েছে। এ কথা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। কয়েকজন হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবস্থা সামাল দেয়।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে উজ্জ্বলবাবু বলেন, “দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়। আমি তাকে পরীক্ষা করে বুঝতে পারি দেহে প্রাণ নেই। বাড়িপ লোকজনদের সে কথা বলতেই তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে চলে যান।” শ্রীপদবাবুর দাবি, “আমি শিশুটিকে পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য করি ওর হৃদস্পন্দন রয়েছে। তাই ওকে দ্রত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। প্রথমে হাসপাতালে গুরুত্ব দিয়ে দেখলে হয়তো শিশুটি বেঁচে যেত।”
যদিও সুপার সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “শিশুটিকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সময় বুঝতে পারি, অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অনেক সময় জলে ডুবে যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর পেট থেকে জল বের হওয়ার সময় চোখের পাতা সরে যাওয়া দেখে মনে হতে পারে সে বেঁচে রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে।” তিনি আরও জানান, একবার চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে দেওয়ার পরে ভাল করে পরীক্ষা না করেই সে বেঁচে আছে বলে মন্তব্য করে একজন কোয়াক চিকিৎসকের এ ভাবে মানুষকে উত্তেজিত করা ঠিক হয়নি। |