হাসপাতালে কর্তব্যরত এক চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত জগবন্ধু দাস ও জয়দেব দাস দু’জনেই করিমপুরের মধ্য গোপালপুরের বাসিন্দা। মঙ্গলবার সুদীপা মণ্ডল নামে কর্তব্যরত ওই চিকিৎসক থানায় লিখিত অভিযোগ জানালে রাতেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার রীতা দাস (১০) নামে এক রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। অভিযোগ, রোগীর বাড়ির আত্মীয়রা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর বুধবার হাসপাতালে এসেছিলেন তেহট্টের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ সরকার। তিনি বলেন, “চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ দিন হাসপাতালের সকলকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ঠিক কি কারণে এমন ঘটনা ঘটল তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।”
|
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ |
হাসপাতালের চিকিৎসক বললেন, আর বেঁচে নেই। বাড়ি ফিরে আসার পরে মৃতের চোখের পাতা নড়েছে বলে দাবি করে পরিবারের লোকেরা। স্থানীয় এক চিকিৎসকও জানান, দেহে প্রাণ আছে। সেখান থেকে ফের হাসপাতালে। এ বার হাসপাতালের সুপার পরীক্ষা করে জানালেন, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে রোগীর। বুধবার এই ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হুলুস্থূল বাধে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। চলে বিক্ষোভ, ভাঙচুর। পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে খেলার সময় পুকুরে পড়ে যায় বছর দু’য়েকের দেবকুমার হালদার। তাকে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক উজ্জ্বল বসাক দেবকুমারকে পরীক্ষা করার পরে সে মারা গিয়েছে বলে জানান। বাড়ি ফেরার পরে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক শ্রীপদ দেবনাথকে ডেকে আনা হলে তিনি জানান, দেবকুমারকে বেঁচে আছে। শিশুটিকে ফের হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা জানান, দেহে প্রাণ নেই। কিন্তু তারপরেই গোলমাল ছড়ায়। হাসপাতালের সুপার জানান, অনেক সময় জলে ডুবে যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরে পেট থেকে জল বের হওয়ার সময় চোখের পাতা সরে যায়। যা দেখে মনে হতে পারে, সে বেঁচে আছে।”
|
চিকিৎসক কম, বিঘ্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে |
চিকিৎসকের সঙ্কটের কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মাস দু’য়েক আগেও চার জন স্থায়ী চিকিৎসক ছিলেন। দু’জন উচ্চতর পড়াশোনার উদ্দেশ্যে অন্যত্র চলে যান। দু’জন অস্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। এই দুই চিকিৎসকের মধ্যে সপ্তাহ খানেক আগে এক জন কাজে ইস্তফা দেন। সম্প্রতি এলাকা জুড়ে আন্ত্রিক-সহ নানা রোগে আক্রান্ত প্রচুর রোগী ভর্তি হচ্ছেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। যথেষ্ট জায়গা না থাকায় একই শয্যায় একাধিক রোগীকে রাখা হচ্ছে। এক দিকে, রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্য দিকে, চিকিৎসক কম। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা। চিকিৎসকের ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক তথা বিএমওএইচ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “রোগীর চাপ বাড়ছে। এক জন চিকিৎসক না থাকায় পরিষেবা দিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে।” মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষচন্দ্র মণ্ডল জানান, মন্তেশ্বরের ময়নামপুর এবং ধান্যখেড়ুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের যে দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন তাঁদের এক দিন করে মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, এখানে স্থায়ী চিকিৎসক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। |