হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের মামলায় তাঁকে ফোন করে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছিল বলে মঙ্গলবার এজলাসে বসেই অভিযোগ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র। বুধবার প্রধান বিচারপতির ওই অভিযোগ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।হাইকোর্টে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত মামলার অন্যতম আইনজীবী বিকাশবাবু এ দিন এজলাসে বলেন, কলেজ-কর্তৃপক্ষের অনুকূলে রায় দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পক্ষপাতিত্বের অনুরোধ করে ফোন এসেছে বলে যে-অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। সেই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। কে বা কারা ওই ফোন করেছিলেন, তা জানা জরুরি।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি নিজেই এজলাসে বলেন, “আমার ল্যান্ডফোনে একটি ফোন এসেছিল। আমাকে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে রায় দিতে বলা হয়।” তার পরেই ওই মামলা আর তাঁর এজলাসে রাখা উচিত নয় বলে মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি সেটি অন্য বেঞ্চে পাঠানোর কথা জানান। বিকাশবাবু এ দিন হাইকোর্টে বলেন, প্রধান বিচারপতির ওই মন্তব্যে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ সম্পর্কে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। তাই প্রধান বিচারপতির তোলা অভিযোগের তদন্ত হওয়া জরুরি। প্রধান বিচারপতি অবশ্য এ ব্যাপারে তাঁর মতামত জানাননি। ওই ফোনের প্রেক্ষিতে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠানোর কথা জানানো হয়েছিল মঙ্গলবারেই। বিকাশবাবু এ দিন প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, এই ডিভিশন বেঞ্চেই ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হোক। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের প্রতি তাঁদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আস্থা রয়েছে হাইকোর্টের উপরেও।
এই আর্জির পরে প্রধান বিচারপতি জানান, সহকারী বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সঙ্গে আলোচনা করে আজ, বৃহস্পতিবার মতামত জানাবেন তিনি।
১৫ জুলাই, সোমবার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার শেষ দিন। ওই দিনের মধ্যেই হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজে প্রথম বর্ষের ভর্তি শেষ করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। বিকাশবাবু এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ইতিমধ্যেই আপিল মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। শুধু রায় ঘোষণা বাকি। এই সময়ে মামলাটির শুনানি যদি অন্য ডিভিশন বেঞ্চে নতুন করে শুরু হয়, তা হলে রাজ্যের ২০০ জন ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়া থেকে বঞ্চিত হবেন।
২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষে আইনি জটিলতায় আটকে যাওয়ায় হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ প্রথম বর্ষে কোনও ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করতে পারেনি। ওই কলেজ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে প্রায় দু’বছর ধরে। রাজ্যে সরকার বদলের পরে নতুন সরকার, রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআই ওই কলেজের অনুমোদন বাতিল করে। হাইকোর্টে মামলা হলে অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন বিচারপতি গিরিশ গুপ্ত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে এমসিআই। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানির পরে রায় দেওয়ার মুখেই মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠানোর কথা বলা হয়। মামলাটি ওই বেঞ্চেই রাখার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি আজ কী অভিমত দেন, সকলের নজর এখন সে-দিকেই।
|