পান খাওয়ার নাম করে প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়নাতলি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। কিশোরীর বাবা থানায় অভিযোগ করেছেন। পুলিশ শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করেছে। ঘটনাচক্রে, কিশোরীর বাবা এলাকার সক্রিয় সিপিএম সমর্থক। অভিযুক্ত যুবক তৃণমূলের কর্মী হিসেবে পরিচিত। ফলে, বিষয়টি নিয়ে উভয় তরফে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের চাপেই পুলিশ মামলাটি লঘু করতে চাইছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের অভিযোগ, ওই যুবক দলের হয়ে দু-একটি জায়গায় প্রচারে গেলেও সক্রিয় কর্মী নন, সব জেনেও সিপিএম ঘটনার সঙ্গে তাঁদের দলকে জড়াতে চাইছে বলেও তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেছেন, “অভিযোগ পেয়েই মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” কোনও অফিসার-কর্মীর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী বাড়িতে একা ছিল। সে সময় তার বাবা মা জমিতে ধান রোয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সুযোগে প্রতিবেশী যুবক মহানন্দ সরকার ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সেই সময় ১৪ বছর বয়সী নাবালিকা রান্নাঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল। মহানন্দ আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ওই কিশোরী চিৎকার করলে তার গলা টিপে ধরা হয় বলেও অভিযোগ। প্রতিবেশী অপর এক কিশোরী চিৎকার শুনে বাড়িতে ঢুকলে অভিযুক্ত যুবক বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ওই কিশোরীর কথায়, “বাড়িতে ঢুকে প্রথমে ওই প্রতিবেশী যুবক পান খেতে টায়। আমি বলেছিলাম পান নেই। ও বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে ভেবে রান্নাঘরে ঢুকি। কিছুক্ষণ বাদে চড়াও হয়ে শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে।”
ওই কিশোরীর বাবা জানান, তাঁরা সিপিএম সমর্থক। তাঁর অভিযোগ, “মহানন্দ তৃণমূলের হয়ে প্রচারে এসেছিল। আমাদের সিপিএম করা নিয়ে অনেক কটাক্ষ করেছিল সে। কিন্তু, আমার মেয়ের উপর কেন এ ভাবে অত্যাচার চালাল তা এখনও বুঝতে পারছি না।” মহানন্দকে অবশ্য বাড়িতে মেলেনি। তাঁর বউদি রত্না সরকার অবশ্য বলেন, “আমার দেওর ওই ধরণের কাজ করতে পারে বলে বিশ্বাস করি না। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।” পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকার তৃণমূল প্রার্থী গীতা কর্মকার অবশ্য দাবি করেন, মহানন্দ তাঁর হয়ে প্রচার করেনি। তিনি অভিযোগ করেন, ভোটের বাজার গরম করতে মিথ্যে অভিযোগ করছে সিপিএম। তৃণমূলের অপর এক নেতা অবশ্য রণজিৎ সরকার বলেন, “ওই যুবক আমাদের সমর্থক। কিছু জায়গাতে সে প্রচারে গেলেও সক্রিয় ভাবে সে আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। ওই ঘটনার নিন্দার ভাষা নেই। এই এলাকায় আগে তৃণমূল ছিল না। গ্রামের কোন উন্নয়ন না হওয়ায় আমরা তৃণমূলের প্রার্থী দাঁড় করাই। অবস্থা বেগতিক দেখে আমাদের দলের উপর এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
গ্রামের সিপিএম নেতা বাবলু হোসেন বারিক কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় বিস্মিত। তিনি বলেন, “ওই যুবক তৃণমূলের সঙ্গে প্রচার করত বলে সকলে জানেন। অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টা বাদেও পুলিশ কেন তাকে গ্রেফতার করছে না তা বুঝতে পারছি না। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে আমরা বড় ধরণের আন্দোলনে নামব।” যদিও জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি গুড্ডু সিংহ বলেন, “ওই যুবক আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। আমরা ঘটনার নিন্দা করছি। ঘটনা সত্যি হলে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করুক।” |