আষাঢ়ে বৃষ্টি জলে থইথই চারদিক। পাট কাটা ও ধান বোনার কাজে ব্যস্ত গাঁয়ের লোকজন। ফুরসৎ নেওয়ার সময় নেই। শ্রাবণের মাঝামাঝিতে ধান বোনার কাজ শেষ না করলে ফসল মিলবে না। এদিকে খালবিলে জল থাকতে পাট কেটে পচানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ধৈর্য ধরে কথা শোনার সময় কোথায়! এই পরিস্থিতিতে ভোটের প্রচারে বিপাকে পড়ছেন বিভিন্ন দলের কর্মীরা। দিনে সভা ছেড়ে নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যার পরে প্রার্থীকে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে কর্মীদের।
এতদিন ছোটছোট সভার আয়োজন করে প্রচারের কাজ সেরেছে বিভিন্ন দল। সকালে অথবা দুপুরে স্থানীয় স্কুল মাঠ বা ক্লাব ঘরে সভা হয়েছে। বিকাল হতেই আলোচনায় বসেছেন কোনও বাড়ির উঠানে। ‘টারি বাড়ির মিটিং’ নামে পরিচিত এই সভা এবার নেই বললেই চলে। তৃণমূল কিসান কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটি সদস্য বাবলু রায় বলেন, “সকাল থেকে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। বৃষ্টি চলেছে। দুপুরের পরে রোদ উঁকি দিলেও সভা কী করে হবে? লোকই নেই। তাই রাতে প্রচার করতে হচ্ছে।” বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ভোরের আলো ফুটতে প্রায় প্রতি পরিবারের লোকজন চলে যাচ্ছেন জমিতে। তাঁদের বক্তব্য, আষাঢ়ের কয়েকটা দিন না-খাটলে বছরের খাবারে টান পড়বে। সামনে পুজোয় কেনাকাটাও সম্ভব হবে না। ময়নাগুড়ির মরিচবাড়ির চাষি নিত্যানন্দ রায় বলেন, “অন্য সময় ভোট সভাগুলিতে থাকতাম। এ বারও অনেকে ডাকছে। কিন্তু সময় পাইনি। একটা দিন মার গেলে সমস্যা হয়ে যাবে।” ময়নাগুড়ি, ক্রান্তি, মৌলানি, ধূপগুড়ি, চ্যাংরাবান্ধা জুড়ে একই ছবি।
কৃষক সভার জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য নির্মল চৌধুরী বলেন, “এখন মাঠে কাজের সময়। ভোট নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতে রাজি নয়। তাই ঠিক করেছি হাট-বাজার ছাড়া দিনের বেলায় গ্রামের ভিতরে মিছিল মিটিং করা হবে না।” পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে যে উৎসবের আবহ তৈরি হয়, সেটা নেই এবার। রাজনৈতিক দলের মুষ্টিমেয় কিছু কর্মী ও সমর্থককে পোস্টার ব্যানার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। প্রচারের কাজ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী দলীয় দফতরে দিনভর কচিকাঁচাদের ভিড়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি মহকুমায় এবার ২৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। জমিতে জল জমে যাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় পাট কাটার কাজ শুরু হয়েছে। জমি খালি করে সেখানে ধান বোনার প্রস্তুতি চলছে। এবার ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ধান বোনার কাজ শেষ করা জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল ধান এরপরে বুনলে ফলন কম হবে।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা বলেন, “বছরের খাবারের ব্যবস্থা এই কয়েকটা দিনের পরিশ্রমের উপরে নির্ভর করে, কেউ কি সেটা ছেড়ে ভোটের কথা শুনতে চায়।” ময়নাগুড়ির আরএসপি বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “দিনে গ্রামে হাটে খালি প্রচার হচ্ছে।” |