পুলিশ ও দুজন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতেই মদ বিরোধী অভিযানে নেমে এলাকার লাইসেন্স প্রাপ্ত একটি বিলিতি মদের দোকান ভেঙে, কিছু জিনিস পুড়িয়ে দিলেন একদল বাসিন্দা। বুধবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ভক্তিনগর থানার ২ নম্বর ডাবগ্রাম এলাকার জলেশ্বরী বাজারের কাছে ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনার পরে এলাকার ক্ষিপ্ত মহিলারা আশেপাশের সব বেআইনি মদের দোকান ভাঙতে চাইলে তৃণমূলের নেতারা রাজি হননি বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা মামণি রায়, মিনা রায়, প্রতিমা অধিকারীর অভিযোগ করেন, “এলাকার সব দোকান ভেঙে ফেলা উচিত।” বাসিন্দাদের ক্ষোভের খবর পেয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “সরকারি অনুমতি থাকলেও বাসিন্দাদের আপত্তি রয়েছে বলে সেই দাবিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব মদের দোকান ভেঙে দিতে হবে।” |
এই ঘটনার পরে বাসিন্দাদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য সরকারের দেওয়া মদের দোকানের লাইসেন্স নিয়ে আপত্তি থাকলে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা কেন মহাকরণে যোগাযোগ করছেন না? সরাসরি আবগারি মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়াও যেতে পারে। তা হলে কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে হচ্ছে শাসক দলের নেতা-কর্তাদের? মন্ত্রী বলেছেন, “সব জায়গাতেই আমরা জানাব।” পাশাপাশি, এলাকার বাসিন্দাদের তরফে কয়েকজন জানান, সব দোকান ভাঙার কথা বলে মাত্র একটি লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকান ভেঙে অভিযান বন্ধ করায় নানা জল্পনা দানা বাঁধতে পারে। সে জন্য দ্রুত অভিযানের দাবি তুলেছেন তাঁরা। পুলিশ অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
এদিন সকালে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মার উপস্থিতিতে লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের দোকানে তালা ঝোলানো, কিছু জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেন বাসিন্দারা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পুলিশও যায়। পুলিশের সামনেই অবরোধ, অভিযান চলে। পরে তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, “এলাকার বেশির ভাগ লোক দিনমজুরের কাজ করনে। তাঁরা যাতে নেশায় আচ্ছন্ন না হন, সে জন্য অভিযান চালানো হয়।”
যে দোকানে অভিযান হয়েছে, তার মালিক অমর সাহা বলেন, “এ দিন সকালে পুজো করতে দোকানে যাই। সমস্ত কিছু ফেলে দেওয়া হয়। সকলেই সব কিছু দেখেছেন। কেন লাইসেন্স থাকার পরেও এমন হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না।”
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের রাজগঞ্জ ব্লকের আওতায় পড়ে। রাজগঞ্জের বিডিও নরবু চোয়াং শেরপা বলেন, “মদের দোকানের লাইসেন্স রাজ্য আবগারি দফতর দেয়। কোনও অভিযোগ পেলে তা দেখব।” |
ওই এলাকার মদের দোকানে অভিযানের খবর পেয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেন, “আমরাও বেআইনি মদের কারবারের বিরুদ্ধে। কোথাও বাসিন্দাদের আপত্তি থাকলে সেখানে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া উচিত নয় বলে আমরাও মনে করি। কিন্তু, সব মদের দোকানে অভিযানের নামে একটি মাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে অভিযান হলে উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে। আশা করব ওই অভিযানের আড়ালে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। তবে আমাদের মনে হয়, পুলিশ-প্রশাসনের গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। তা ছাড়া পুলিশের সামনে লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকানে ভাঙচুর হলে তাঁরা দাঁড়িয়ে দেখবে কেন?” মোহনবাবু জানান, তাঁরা দলীয় পর্যায়ে সব বেআইনি মদের কারবারের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আন্দোলনে নামবেন।
|