মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল একমাত্র ছেলে মেঘনাদের। সিঁদুর মুছে ফেলা হয়েছিল স্ত্রী গৌরীমায়াদেবীর। কালিম্পংয়ের পাইয়ুং গ্রামের হরিপ্রসাদ ঘিমিরের ছবির সামনে জ্বালানো হয়েছিল ধূপ। তাতে মালা পরিয়ে দিয়েছেন ছেলে মেঘনাদ। পরের দিন সবে ভজন-কীর্তন শুরু হতে চলেছে, এমন সময় এল ফোনটা।
মেঘনাদকে ফোন করে গ্রাম থেকে নির্বাচিত জিটিএ সদস্য কল্পনা তামাং জানান, তাঁর বাবা সুস্থ। কয়েক দিন বাদেই বন্যা বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড থেকে বাড়ি ফিরবেন। তারপরেই রাতারাতি বদলে গেল ঘিমিরে পরিবারের উঠোনের দৃশ্যটা।
হরিপ্রসাদ ফেরার পরে তাঁর ‘পুনর্জন্ম’ হয়েছে ধরে নিয়ে শুরু হল নামকরণ অনুষ্ঠান। পুরোহিতের নিদান, স্ত্রী গৌরীদেবীকে ফের বিয়ে করে বৈধব্য দশা থেকে মুক্তি দিতে হবে। সেই মতো ঘটা করে হরিপ্রসাদবাবু ও
হরিপ্রসাদ ঘিমিরে। —নিজস্ব চিত্র |
গৌরীমায়াদেবীর ‘বিয়ে’ও হয়েছে। সেখানে হাজির ছিলেন এলাকার প্রায় সকলেই। পাত পেড়ে খেয়েছেন তাঁরা। হরিপ্রসাদবাবুর কথায়, “ভগবানকে অশেষ ধন্যবাদ। বাড়িতে ফিরে এসে খুবই ভাল লাগছে।” কেমন লাগল নিজের দ্বিতীয়বার নামকরণ আর বিয়ের অনুষ্ঠান? প্রবীণ হরিদাসবাবুর সরস মন্তব্য “স্ত্রীকে আর নিজের নামকে নতুন করে পেলাম।”
২০০৭ সাল থেকে ঘর ছাড়া তিনি। এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলে বড় হতে চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন উত্তর ভারতে। দিন কেটেছে নানা তীর্থে। হরিদ্বার, কেদার-বদ্রীর বিভিন্ন আশ্রমেই থাকতেন। গত অক্টোবরে বাড়ি ফিরে ৩ মে আবার উত্তর ভারতে ফিরে যান। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে বন্যার কথা শুনে পরিজনেরা চেষ্টা করেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু পারেননি। এর মধ্যেই ২৮ জুন মেঘনাদের মোবাইলে ফোন করে এক ব্যক্তি জানান, বন্যায় হরিপ্রসাদবাবুর মৃত্যু হয়েছে। সেই খবর পেয়ে সিকিম থেকে কালিম্পঙের বাপের বাড়িতে চলে আসেন দুই মেয়ে ভীমকলা এবং কৌশিলাও। শুরু হয় শ্রাদ্ধশান্তি। তার পরেই খবর আসে, তিনি সুস্থ রয়েছেন। বাড়ি ফেরেন ৩ জুলাই।
সেই খুশিতেই গ্রামের প্রায় ২০০ বাসিন্দা ভিড় করেছিলেন হরিপ্রসাদবাবুর বাড়িতে। মেঘনাদও আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখেননি। ডাল-ভাত-ভাজা, রুটি, সবজি সব কিছুরই আয়োজন ছিল। তাঁর কথায়, “গ্রামের সকলেই সেদিন বাবাকে দেখতে এসেছিলেন। কাউকে না খাইয়ে ছাড়িনি। হাজার হোক বাবাকে নতুন করে পাওয়া তো বটেই!” |