ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই
তালিকা-বিভ্রাটের জের, বহু শিক্ষকের বিএড অনিশ্চিত
প্রশিক্ষণ যাঁর নেওয়ারই কথা নয়, তাঁর নাম উঠেছে তালিকায়। আবার প্রশিক্ষণ নিতে আবেদন জানিয়েও কেউ কেউ নিজের নামটাই খুঁজে পাচ্ছেন না সেখানে। এমনকী ওই তালিকায় এমন নামও দেখা যাচ্ছে, যে নামে ওই নির্দিষ্ট স্কুলে কোনও শিক্ষকই নেই!
এই নিয়ে জেলায় জেলায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই। বিএড প্রশিক্ষণে তাঁদের নাম নেই কেন তার সদুত্তর চেয়ে এবং নতুন করে তালিকা প্রকাশ করার দাবিতে বুধবারও বীরভূমের সিউড়িতে মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শকের অফিসে ঘেরাও-বিক্ষোভ করেন শ’দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা। এর আগে সোমবার তালিকায় নাম না থাকায় পুরুলিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরেও শিক্ষকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। স্কুল পরিদর্শকেরা উচ্চ শিক্ষা দফতরে পরিস্থিতি জানিয়ে সুরাহার রাস্তা খুঁজছেন।
গোল পেকেছে আসলে তালিকা নিয়েই। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর থেকে ‘ওডিএল’ পদ্ধতির (ওপেন ডিসটান্স লার্নিং) মাধ্যমে প্রশিক্ষণহীন হাইস্কুল শিক্ষকদের বিএড প্রশিক্ষণ দিতে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণকেন্দ্র নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় এমনই সব অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রশিক্ষণহীন হাইস্কুল শিক্ষককে বিএড প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে একলপ্তে বিএড পড়ানোর পরিকাঠামো এ রাজ্যে নেই। তাই ‘ওডিএল’ পদ্ধতির মাধ্যমে ওই শিক্ষকদের বিএড প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। নির্দেশ পেয়ে হাইস্কুলগুলি তাঁদের প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের নামের তালিকা রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে জমা দিয়েছিলেন।

তালিকায় নাম না থাকায় বিক্ষোভ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।-নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নামের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরেই শিক্ষকদের চোখ কপালে ওঠে। ওই তালিকা অনুযায়ীই শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ নেবেন। এমনকী সেই তালিকা থেকে গত ৫ জুলাই ওই কোর্সে ভর্তি শুরুও হয়ে গিয়েছে। শেষ হবে ১২ জুলাই। কিন্তু তালিকা-বিভ্রাটের জেরে ভর্তি হতে না পেরে মুশকিলে পড়েছেন একটা বড় অংশের বিএড প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক। বীরভূমের স্কুল পরিদর্শক (উচ্চ মাধ্যমিক) আনসার আলি মির্ধা বলেন, “বুঝতে পারছি না কী ভাবে এত বড় ভুল হল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ না পেলে ওই শিক্ষকদের কী হবে, সেটা ভেবেও আমরা চিন্তিত। স্কুল শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
আট জনের নাম পাঠিয়েছিল বীরভূমের মহম্মদবাজারের ঢেউচা গৌরাঙ্গিনী উচ্চ বিদ্যালয়। তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন মাত্র দু’ জন। মাড়গ্রাম থানার সাহাপুর হাইস্কুল আবার তাদের প্রশিক্ষণহীন ৭ জন শিক্ষকের নাম উচ্চ শিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু তালিকায় ওই স্কুলের ৬ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে। আবার সেই তালিকায় এমন তিন জনের নাম আছে, যে নামে ওই স্কুলে কোনও শিক্ষকই নেই। উদ্বিগ্ন দুই শিক্ষক সৌমেন মণ্ডল ও রেণু বাস্কি বলেন, “ইতিমধ্যেই ভর্তি শুরু হয়েছে। অথচ আমাদের নাম তালিকায় নেই। বুঝতে পারছি না, এখন আমাদের কী হবে!” বীরভূমের বেশ কয়েকটি স্কুলের বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নামও ওই তালিকায় ঢুকে পড়েছে। অথচ নাম নেই একই স্কুলের প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদেরই। তারাপীঠের তারাতীর্থ বিদ্যামন্দিরের ক্ষেত্রে আবার এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের নামও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে! একই চিত্র নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার মতো নানা জেলাতেও।
প্রশিক্ষণহীন সমস্ত শিক্ষকদের নাম জেলা স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছিল। সেই দফতর থেকেই এমন ভুলে ভরা তালিকা নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ। সাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক তথা বীরভূমে ডব্লিউবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অধীরচন্দ্র দাসের দাবি, “বীরভূমে প্রায় ১৪০০ বিএড প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক রয়েছেন। সেই নামের তালিকায় প্রায় ৫০০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে এমন বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া শিক্ষকেরা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।”
এই পরিস্থিতিতে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুভাষশঙ্কর সরখেলের দাবি, “যে তালিকা ডিরেক্টর অফ স্কুলস থেকে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলিই আমরা প্রকাশ করেছি। দফতর যদি ভুল সংশোধন করে নতুন তালিকা পাঠায়, আমরা তা প্রকাশ করব।” রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিব সমর ঘোষ বলেন, “নামের তালিকায় বেশ কিছু জেলার ক্ষেত্রে অসঙ্গিত ধরা পড়েছে। আমরা প্রতিটি জেলার মাধ্যমিক পরিদর্শককে সংশোধিত তালিকা পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছি। সে ক্ষেত্রে ভর্তির সময় একটু বাড়ানো যেতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.