রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সম্পর্কে অস্বস্তির আবহ জারিই থাকল।
আদালত-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে পদ থেকে ‘সরিয়ে’ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে শুরুটা করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ক’দিনে সেই পথে হেঁটেছেন দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। বুধবারের সংযোজন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
প্রথম দফার নির্বাচনের আগের দিন দুপুরেই নদিয়ার চাপড়ায় তাঁর মন্তব্য: “রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরাদেবীর উস্কানিতেই বিভিন্ন জেলায় খুনের রাজনীতি চলছে।” সন্ধ্যায় দুর্গাপুরে তিনি বলেন, “মীরা পাণ্ডে সাংবিধানিক পদে আছেন, তাই মাত্রা রেখে কথা বলতে হয়। ২০০৮ সালে সিপিএমের সুপারিশে তাঁর নিয়োগ। নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ তিন বছরের। কিন্তু ২০১০ সালে লোকসভা ভোটের পরে বুদ্ধবাবুরা তাঁর মেয়াদ তিন বছর বাড়ান। সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাওয়া সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে দিলেন না।”
এ দিন নদিয়ার চাপড়ায় হাতিশালায় গিয়েছিলেন মুকুলবাবু। মঙ্গলবার সকালে নদিয়ার ওই গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত তৃণমূল কর্মী মিঠু ঘোষের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “নতুন করে বাংলায় যিনি অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তিনি নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।” তাঁর দাবি, “সারা বাংলা জুড়ে খুনের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে সিপিএম, কংগ্রেস, মাওবাদীরা। এটা সম্ভব হচ্ছে কারণ নির্বাচন কমিশনার মীরাদেবী পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন।”
মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষের পরে তৃণমূলের দাবি ছিল, সিপিএমের দুষ্কৃতীরাই মিঠুকে খুন করেছে। এ দিন সেখানে গিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “এক মাসও হয়নি, আমাদের ১২ জন কর্মী খুন হয়েছেন। নদিয়া জুড়ে একের পর এক কর্মী খুন হচ্ছেন।” তবে কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। কিন্তু আক্রান্ত হলে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করুন।”
পরে দুর্গাপুরে গিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “যেহেতু শাসকদলের সদস্য আমরা, তাই সংযমী প্রতিক্রিয়া দেখাতে হচ্ছে। কিন্তু এই উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না।” তাঁর দাবি, “সিপিএমকে সাহায্য করতে মীরাদেবী মিলিটারি আনুন, আন্তর্জাতিক বাহিনী আনুন, ফলের কোনও হেরফের হবে না। সদ্য হাওড়া উপনির্বাচনের ফল দেখেই তা বোঝা যায়।” সেই সঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, “কেন্দ্র যদি বাহিনী দিলই, আগে দিল না কেন?”
মীরা পাণ্ডেকে ক্রমান্বয়ে যে ভাবে শাসকদলের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে দরবার করল কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “এক জন সাংবিধানিক প্রধান হয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে অন্য এক সাংবিধানিক প্রধান মীরাদেবীকে গালিগালাজ করছেন, হুমকি দিচ্ছেন, তাতে সংবিধানের অমর্যাদা হচ্ছে বলে রাজ্যপালকে জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করতে অনুরোধ করেছি। অনুরোধ করেছি, কমিশনার সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী যাতে আর এই ধরনের শব্দ আর ব্যবহার না করেন, তার জন্য ব্যবস্থা নিন।”
প্রদেশ কংগ্রেসের দাবি, রাজ্যপাল বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। |