রাজ্যের ১৩টি পুরসভার নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা অবসানের ইঙ্গিত মিলেছে। বুধবার প্রধান হাইকোর্টের বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ওই পুরসভাগুলোয় নির্বাচন করতে চায়। কলকাতা-সহ অন্যান্য পুরসভার যে সব ওয়ার্ডে বর্তমানে কাউন্সিলর নেই, ওই দিন সেখানেও উপ নির্বাচন সেরে ফেলতে চায় সরকার।
রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন মহাকরণে বলেন, “তেরোটি পুরসভার মেয়াদ শেষের পর থেকে পরবর্তী বোর্ড গঠনের আগে পর্যন্ত আইন মেনে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। প্রশাসক হবেন সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকেরা। আজ, বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।” কলকাতা-সহ বিভিন্ন পুরসভার মোট ২২টি ওয়ার্ডের উপ নির্বাচন একই দিনে করা হবে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদও। আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং মহাকরণে মন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ধারণা, পুর নির্বাচন নিয়ে জটিলতা অবশেষে কাটতে চলেছে।
১৩টি পুরসভার নির্বাচন ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ-মামলা করেছিলেন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী। এ দিন তার শুনানি ছিল। শুনানির শুরুতেই রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকার ৭ সেপ্টেম্বর পুরসভাগুলোয় নির্বাচন করাতে চায়।” সরকার যে সেপ্টেম্বরেই বকেয়া পুরভোট সেরে ফেলতে আগ্রহী, তা জানিয়ে রাজ্যের পুর-সচিব এ মাসে কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন বলে এ দিন আদালতে দাবি করেছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
শুনানির শেষে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে তাদের বক্তব্য সাত দিনের মধ্যে হলফনামার আকারে পেশ করতে বলেছে। পাশাপাশি, ওই দিনে ভোট আয়োজনে করতে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত কি না এবং সে জন্য তাদের কী কী প্রয়োজন, কমিশনের কৌঁসুলিকেও তা সাত দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। আদালত জানিয়েছে, দু’পক্ষের হলফনামা বিচার করে আগামী বুধবার তারা মতামত ঘোষণা করবে।


পুর-কথা

মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, আলিপুরদুয়ার, চাকদহ,
ডালখোলা, বালুরঘাট, পানিহাটি, হাবড়া, ডায়মন্ড হারবার, মেদিনীপুর, বর্ধমান, গুসকরা ও দুবরাজপুর

২৯ জুন, ২০০৮

১৪ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে
রাজ্য পুর-আইনের ১৪ নং ধারার ৪ নং উপধারা
বোর্ড গঠনের ৫ বছরের মধ্যে ফের ভোটের মাধ্যমে নতুন বোর্ড গড়া না-গেলে চলতি বোর্ড ভেঙে যাবে। সেখানে রাজ্য সরকার প্রশাসক বা প্রশাসকমণ্ডলী বসাতে পারে। ২০০০-এ এই মর্মে পুর-আইন সংশোধিত হয়। আগের (১৯৯৩) আইনে শুধু বলা ছিল, পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হলে জেলাশাসক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে দৈনন্দিন কাজ চালাতে পারেন।
সংবিধানের ২৪৩ (ইউ) ধারা
প্রতি পুরবোর্ড প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত চলবে
(একমাত্র আইনি নির্দেশে পুরসভা ভাঙা না-হলে)।
তার বেশি নয়। আইনি পথে ভাঙতে হলে সংশ্লিষ্ট পুরসভার বক্তব্যও শুনতে হবে।
কোনও আইন সংশোধন হলেও তার আগে গঠিত পুরসভাকে সেই সংশোধিত আইনবলে
মেয়াদ শেষের আগে ভাঙা যাবে না। পুরসভা গড়তে হবে নির্বাচন করেই।
মেয়াদ পূর্ণের আগে পুরসভা ভেঙে গেলে বাকি সময়ের জন্য নতুন বোর্ড গড়া যাবে।

বাসবীদেবীর মামলায় রাজ্য পুর-আইনের ১৪ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারাটি খারিজের আবেদনও রয়েছে। ওই উপধারা অনুযায়ী, পাঁচ বছরের মেয়াদ ফুরনোর পরেও কোনও পুরসভার কাজকর্ম চালাতে ছ’মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা যেতে পারে। বাসবীদেবীর দাবি, এটি সংবিধানের ২৪৩-ইউ ধারার পরিপন্থী। সংবিধান মোতাবেক, পুরসভা বা পঞ্চায়েতে পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন করতে হবে। এবং তা হতে হবে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষের আগেই।
এ দিন বাসবীদেবীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ২৪৩-ইউ ধারার উল্লেখ করে রায় দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রাজ্য পুর-আইনের ১৪ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারাটি বাতিল করা হোক।” কলেজ সংসদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত, পুরসভার মতো সব ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করতে সরকার গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন সুব্রতবাবু। বেঞ্চ জানায়, বুধবার, অর্থাৎ পরবর্তী শুনানিতে তারা বিষয়টি শুনবে।
আগামী ১৪ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে তেরোটি পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ ফুরোচ্ছে। কমিশনের দাবি: তার আগেই নির্বাচন সেরে ফেলার লক্ষ্যে গত বছর থেকে তারা রাজ্যকে একাধিক চিঠি দিয়েছে, কিন্তু জবাব পায়নি। এ দিন সরকারের বক্তব্যে পরিষ্কার, মেয়াদ শেষের আগে পুরসভাগুলোয় নির্বাচন প্রক্রিয়া সেরে ফেলার উপায় কার্যত থাকছে না। রাজ্য পুর দফতরের এক কর্তা জানান, “মেয়াদ শেষের পরে নতুন পুরবোর্ড গঠন না-হওয়া ইস্তক ১৩টি পুরসভার দায়িত্ব থাকবে সেখানকার এগজিকিউটিভ অফিসারদের হাতে (৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী)। ফলে নাগরিক পরিষেবা বা অন্য কোনও কাজেই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” এ দিকে আগামী ডিসেম্বরে হাওড়া, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর ও ঝাড়গ্রাম পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই নভেম্বরে ওই চারটি পুরসভার নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে প্রশাসন-সূত্রের খবর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.