মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল বাবার। আর তাই নিয়েই বাড়িতে নিত্য অশান্তি। সেই অশান্তিই চরম আকার নিয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। তর্কাতর্কির সময় মেয়েকে শাবল দিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল বাবার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি হুড়া থানা এলাকার জবড়রা গ্রামের।
নিহত কিশোরীর নাম সুনীতা গরাঁই (১৪)। রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়ে রাতভোর উঠোনে পড়ে থাকলেও মেয়েটিকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বুধবার সকালে স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ সুনীতার মৃতদেহ উদ্ধার করে। তার মাথায় ও মাথার পাশে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পরে বাড়ি থেকেই নিহতের বাবা ধরনী গরাঁইকে পুলিশ আটক করে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “রাগের মাথায় তিনিই মেযেকে খুন করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বাবা। তাঁকে আটক করা হয়েছে। ওই শাবলটিও উদ্ধার করা হয়েছে।”
ধরনীবাবু ও তাঁর স্ত্রী আরতিদেবী পেশায় দিনমজুর। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা দু’জনেই কাজে বেরিয়ে যান। যাওয়ার আগে মোবাইলে কাউকে ফোন করা নিয়ে মেয়েকে বকাঝকা করেছিলেন ধরনীবাবু। আরতিদেবী বলেন, “মেয়ের মোবাইল নিয়ে বেশি কথা বলায় ওর বাবার ভীষণ আপত্তি ছিল। বাবা অপছন্দ করে জেনেও সুনীতা মোবাইলে কোনও বন্ধুর সঙ্গে কথা বলত। মেয়ে কার সঙ্গে কথা বলত, তা ও কখনওই জানায়নি। তবে, ওর বাবা সন্দেহ করত। সে কারণেই আপত্তি করেছিল।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ স্বামী-স্ত্রী বাড়ি ফিরে আসেন। ধরনীবাবু গ্রামের কাছে লধুড়কা হাটে গিয়ে কেনাকাটা সেরে ফিরে জানতে পারেন, মেয়ে বাড়িতে নেই। খোঁজ করে জানতে পারেন, মেয়েকে কেউ লক্ষ্মণপুর মোড়ে দেখেছে। লক্ষ্মণপুর গিয়েও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে শোনেন, মধুবন মোড়ে কেউ কেউ সুনীতাকে দেখেছে। মধুবন মোড় তাঁদের গ্রাম থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কের উপর পড়ে। মধুবন মোড়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় ধরনীবাবুর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এক যুবকের সঙ্গে সুনীতা কথা বলছিল। বাবা মেয়েকে তাঁর সঙ্গে বাড়ি যেতে বললে সে নিমরাজি হয়ে মোটরবাইকে চাপে।
বাড়ি ফিরে বাবা-মেয়ের তীব্র কথাকাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, উঠোনে পড়ে থাকা শাবল নিয়ে মেয়ের মাথায় আঘাত করেন ধরনীবাবু। আরতিদেবী বলেন, “সুনীতা আগেও একবার এ রকম না বলে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। মঙ্গলবার একই কাণ্ড ঘটানোয় আমার স্বামী প্রচণ্ড রেগে যান। তর্কাতর্কি চলার সময়েই এই ঘটনা ঘটে গেল।” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরতিদেবী। এ দিন বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনীতার ছোট বোন রিঙ্কুও কেঁদেই চলেছে।
ধরনীবাবু বলেন, “মোবাইলে দীর্ঘ সময় কারও সঙ্গে কথা বলা নিয়ে আপত্তি করেছিলাম। মেয়ে শোনেনি। মঙ্গলবার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরে বকাবকি করার মাঝে সুনীতা ওর মায়ের গায়ে হাত তোলে। রাগের মাথায় আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারিনি।” এখন কি আফসোস হচ্ছে? জবাব আসেনি। মাথা নিচু করে পুলিশের গাড়িতে বসে রইলেন ধরনীবাবু। |