জায়গার নামটা ছোট হলে কী হবে! পুরুলিয়ায় এ নামের ভার অনেক। টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক পদে থাকা নকুল মাহাতোর বাড়ি যে এই পুঞ্চাতেই! অশীতিপর সেই সিপিএম নেতার খাসতালুকেই এ বার মারমার কাটকাট লড়াই।
লালমাটিতে ঘাসফুল ফোটানোর মরিয়া চেষ্টায় এই বর্ষায় হাল ধরেছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, চাষের পথ মোটেও মসৃণ নয়। কাঁটা হয়ে রয়েছেন তৃণমূল-ত্যাগী কংগ্রেস প্রার্থী অনিল হাঁসদা। একদা তৃণমূলের শিক্ষাসেলের অগ্রণী নেতা অনিলবাবু বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে অভিমানে দল ছাড়েন। এ বার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে সুজয়বাবুকে বেগ দিচ্ছেন। আর বলছেন, “বিধানসভার টিকিটটাই শুধু নয়, উপযুক্ত সম্মানটুকুও তো তৃণমূল দেয়নি। আমি তো এ বার অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর! তা অস্বীকার করে কে?” সুজয়বাবুর পাল্টা, “ফ্যাক্টর কি না, তা তো ফলই বলবে।” |
স্তর: জেলা পরিষদ
আসন: ২৪ নম্বর |
তপন মাহাতো
(সিপিএম) |
সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়
(তৃণমূল) |
• পেশা: চাষবাস ও গাড়ি-ট্রাক্টরের ব্যবসা
• নেশা: রাজনীতি
• প্লাস পয়েন্ট: দলের শক্ত ঘাঁটি
• মাইনাস পয়েন্ট: হাওয়া তৃণমূলের দিকে
• প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে: বহিরাগত
• লোকে বলে: ঠিকাদার-ঘনিষ্ঠ |
• পেশা: কৃষিজীবী
• নেশা: রাজনীতি ও সমাজসেবা
• প্লাস পয়েন্ট: কখনও ভোটে হারেননি
• মাইনাস পয়েন্ট: ভোট কাটবে কংগ্রেস প্রার্থী
• প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে: ভাল ছেলে
• লোকে বলে: একরোখা |
|
আর রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী তপন মাহাতো তো রয়েইছেন। ধারে ও ভারে তিনিও কম যান না। সুজয়বাবু যদি হন পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির দীর্ঘদিনের বিরোধী দলনেতা, তা হলে তপনবাবু কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিলেন ওই সমিতিরই বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ। এমনিতে ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি’সিপিএমের এই চেনা স্লোগান পুঞ্চার ক্ষেত্রে খুব খাটে। সেই ’৭৮ সাল থেকে পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতি ধরে রেখেছে সিপিএম। পুঞ্চায় জেলা পরিষদের দু’টি আসনেই গতবার জিতেছিল তারা। বিধানসভা ভোটে মানবাজার কেন্দ্রে (পুঞ্চা এই কেন্দ্রেরই অন্তর্গত) তৃণমূল জিতলেও জেলা পরিষদের এই আসনে সিপিএমের প্রার্থীরই ‘লিড’ ছিল। পরিবর্তনের সুনামিতে বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়ায় সব ওলটপালট হয়ে গেলেও পঞ্চায়েতের হাওয়া যে এখানে সুজয়বাবুর পক্ষে প্রবল, তা মানতে পারছেন না খোদ তৃণমূলের কর্মীরাও। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের এই ২৪ নম্বর আসনের যুদ্ধ তাই সব মিলিয়ে জমাটি।
পানিপাথর, পিঁড়রা, কেন্দা, চাঁদড়া ও জামবাদ—এই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে জেলা পরিষদের ২৪ নম্বর আসন। তিনটি পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় সিপিএম, দু’টিতে তৃণমূল। তপনবাবুর কটাক্ষ, “এখানে বরাবর আমরাই জিতেছি। তা ছাড়া, সুজয়বাবু পুঞ্চার বাসিন্দা হলেও তিনি কংসাবতীর অন্য পাড়ের লোক। এই আসনে তিনি এক প্রকার বহিরাগতই।” জবাবে মুচকি হেসে সুজয়বাবু বলছেন, “আমি বছরভর পুঞ্চার মানুষের পাশে রয়েছি। মানুষই তো ভোটটা দেবেন!” তাঁর পাল্টা দাবি, “এক সময়ে এখানে সিপিএমের সন্ত্রাসে মানুষ কথা বলতে পারতেন না। প্রচার শুরু করে বুঝেছি হাওয়া এখন তৃণমূলের পালে।” আর প্রচার সঙ্গী অম্বুজাক্ষ মাহাতোকে দেখিয়ে বলছেন, “সিপিএমের গরিব স্বার্থবিরোধী কাজে বীতশ্রদ্ধ হয়েই দল ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন পঞ্চায়েত সমিতির এই প্রাক্তন সদস্য।” |