কয়েক ঘণ্টা বাদেই শুরু হবে মেলা। সকাল থেকেই তাই শুরু হয়েছে তোড়জোড়। সবে সেজে উঠছে মাঠ। কেউ পাঁপড়, কেউ মনিহারি কেউ বা জিলাবির দোকান সাজাচ্ছেন। এমন সময়ে পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ গোটা এলাকা। কী হল? কী হল? ৮৬ বছরের প্রাচীন রথের মেলায় এমন দৃশ্য কখনও তো দেখেননি কেউ।
ততক্ষণে কোমরে পিস্তল হাতে লাঠি নিয়ে খাকি বর্দির পুলিশ গোটা এলাকা তল্লাশি চালাচ্ছে। বোমা আছে না কি? চলছে মেলার ব্যাপারিদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ। ততক্ষণে মেলার মাঠে ঢুকেছেন স্বয়ং পুলিশ সুপার-সহ পুলিশ কর্তারা। সঙ্গে আরও পুলিশ। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে এ ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
পরে অবশ্য জানা যায় আসল কথা। দু’দিন বাদে ১৩ তারিখ শাসনের ফুটবল খেলার মাঠে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে জনসভা করতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্যই চলছে এমন আগাম সতকর্তা। নিরাপত্তা কড়াকড়ির আরও কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চ থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বেই বাড়ি শাসনের সিপিএম নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টারের। অবশ্য তিনি এখন শাসন ছাড়া হলেও তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়েছেন জেলা পরিষদ আসনে। আর সভাস্থল থেকে আধ কিলোমিটার দূরে সর্দারহাটিতে বসেছে রথের মেলা। নিরাপত্তার কড়াকড়ি এ জন্যই। আর তাতেই বিপত্তি মেলার মাঠে।
প্রায় ১২ বিঘা মাঠে ১৩ চুড়ার এই রথযাত্রার খ্যাতি আছে বারাসত ২ নম্বর ব্লকে। ওই বিখ্যাত রথ দেখতে হাজির হন চোলপুর, মাদরি, কোলা, তেহাটা, সাসল, সর্দারহাটি-সহ এলাকার ২২টি গ্রামের মানুষেরা। ৮৬ বছরের প্রাচীন এই মেলায় কখনও পুলিশ আসেনি বলে জানালেন সর্দারহাটি গ্রামের অরুণ মণ্ডল। স্থানীয় বাসিন্দা মুকু্ন্দ মণ্ডল বলেন, “পুলিশ বলে পুলিশ। মাঠের চারধারে পুলিশ। ভয় হবে না।” শাসন হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক শ্যামসুন্দর রায় বলেন, “আমাদের গ্রামের রথের মেলায় কখনও গণ্ডগোল হয়নি। পুলিশ তো দুরের কথা। এ বারই এরকমটা হল।”
এলাকার বাসিন্দারা জানান, রথের দিনই শুধু নয়, গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশ টহল দিচ্ছে এলাকায়। ঘরপোড়া শাসনের বাসিন্দারা কেউ কেউ ভেবেছিলেন, তাহলে কী ফের সেই আতঙ্কের দিন ফিরে এল। আবার কী শুরু হবে রাজনৈতিক কোন্দল বোমাবাজি। সইদুল ইসলাম, পরিতোষ ঘোষের মতো খাবার বিক্রেতারা জানালেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শুনে ঘাবড়ে যান অনেকেই। যারা বাইরে থেকে আসেন তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে অবশ্য জেলা পুলিশ কর্তারা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের আগে রুটিন মাফিক প্রস্তুতি ও নজরদারি চালাতেই এ দিন যাওয়া হয়েছিল। আর কিছু নয়। |