উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে পঠন-পাঠন চালাতে চরম সমস্যায় পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের ঘোড়ামারা মিলন বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয় প্রশাসনে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।
পঞ্চায়েত এলাকাটি নদী-জঙ্গল বেষ্টিত। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের বাস। ওই একটিই হাইস্কুল ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠনের একমাত্র ভরসা। কিন্তু স্কুলে পরিকাঠামোগত নানা সমস্যার কারণে পঠন-পাঠনে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কী কী সমস্যা?
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫৬৩। তার মধ্যে ৩০ জন আবাসিক। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র সাত জন। ফলে, তাঁদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। অনেক সময়ে আবার শিক্ষিক-শিক্ষিকারা না এলে পঠনপাঠনই বন্ধ থাকে। নেই কোনও করণিক। ফলে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই যাবতীয় কাজ করতে হয়।
|
ছাত্রদের চারটি ও ছাত্রীদের ২টি শৌচাগার থাকলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য। শ্রেণিকক্ষের চাঙড় খসে পড়ছে। মিড-ডে মিল রান্নার ঘর নেই। অস্থায়ী ছাউনির তলায় রান্নার কাজ হয়। নলকূপ মাত্র একটি। সেই জল ছাত্রছাত্রীরা ব্যবহার করে, মিড-ডে মিল রান্না হয়, গ্রামবাসীরাও নেন।
১৯৫২ সালে ওই বিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন পায়। প্রথম দিকে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব ছিল না। সে সময় ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। ক্রমশ তাঁদের অবসর এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ চালু হওয়ার পর থেকেই ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা কমতে থাকে। এখন নতুন করে কেউ আর ওই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে ইচ্ছুক হচ্ছেন না।
কেন এই অবস্থা?
এলাকাটি প্রত্যন্ত। কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতার কোনও শিক্ষককে ওই বিদ্যালয়ে যেতে হলে কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাট থেকে ট্রলারে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে মুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে ঘোড়ামারা ঘাটে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে আধ ঘণ্টা হাঁটাপথ পেরিয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হবে। নেই থাকার ব্যবস্থা। |
অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে নয়া ভবন। |
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাধনচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “এই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করতে হলে স্থানীয় ভাবে যাঁরা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাঁদেরই নিয়োগ করা হলে সমস্যা কিছুটা মেটে। তা ছাড়া, স্কুলের অন্যান্য পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলির কথাও স্কুল শিক্ষা দফতরে জানানো হয়েছে।”
সহকারী শিক্ষক অভিজিৎ আদক জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে পঠন-পাঠন ভীষণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্লাস নিতে নিতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে।
জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়াল বলেন, “ওই এলাকায় পরিকাঠামোগত নানা অসুবিধা রয়েছে। ওই স্কুলে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠাতে চাইলেও তাঁরা যেতে চাইছেন না। ওই এলাকা থেকেই পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।” স্কুলের পরিকাঠামোগত অভাব মেটানোর ক্ষেত্রে তহবিলের কিছু সমস্যা রয়েছে বলে জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে।
|