তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন বড় বৌ। সিপিএম তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে ছোট বৌকে। জমজমাট লড়াই। দুই বৌয়ের ছবি ও নামের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ভরেছে গোটা গ্রাম।
কিন্তু নির্বাচনে তো একজনকে হারতেই হবে। তখন দুই জায়ের সম্পর্কে তার প্রভাব পড়বে না তো? প্রশ্ন শুনে দুই জা-ই সমস্বরে জানিয়ে দেন, তার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ভিন্ন দলের হয়ে লড়লেও তার আঁচ তাঁরা পড়তে দেবেন না হেঁসেলে। দ্বীপ্ত কণ্ঠে দুই বধূর বক্তব্য, “হারি জিতি নাহি লাজ। আমাদের মধ্যে সম্পর্কে কোনও ঘাটতি হবে না। তাই ঠিক করেছি, কেউ কারও বিরুদ্ধে অবান্তর কথা বলব না। দলের কাউকে তেমনটা করতেও দেব না। যেই জিতি, গ্রাম এবং মানুষের উন্নতিতে মিলেমিশে এক সঙ্গে কাজ করব।
উত্তর ২৪ পরগনরা দেগঙ্গার কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পোলতারআটি গ্রামের হাফিজা বিবি এবং কামারউন্নেসা বিবির লড়াই নিয়ে গ্রামবাসীরাও যথেষ্ট উৎসাহী। |
জ্যাঠতুতো খুড়তুতো দুই ভাই। আব্দুল বারির স্ত্রী হাফিজা এবং রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী কামারউন্নেসা। পরিবারের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে হঠাৎ ভোটের ময়দানে?
গ্রামের মানুষ চাইছেন। এমনটাই দাবি হাফিজা এবং কামারউন্নেসার। কংগ্রেস পরিবার থেকে এসেছেন হাফিজা। জানান, এই আসনে যদি কংগ্রেসের পক্ষে প্রার্থী দেওয়া হত তা হলে কংগ্রেসের হয়েই লড়তেন তিনি। যদিও নিন্দুকদের বক্তব্য, ওই আসনে নাকি তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়েছে কংগ্রেসের। সে জন্যই হাফিজার তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া। যদিও এ কথা মানতে রাজি নন বড় বৌ। তাঁর কথায়, মহিলা প্রার্থী জয়ী হলে আখেরে মানুষের লাভ। অন্যদিকে ছোট বৌ কামারউন্নেসার কথায়, বাপের বাড়িতে সকলে সিপিএম করে। তাই সিপিএমের হয়ে প্রার্থী হওয়া। এই আসনে অন্য কোনও দল প্রার্থী না দাঁড় করানোয় সরাসরি লড়াই দুই জায়ের।
কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৭টি। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৮টি। বর্তমানে পোলতারআটি গ্রামে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী জিতে আছেন। পঞ্চায়েতটিও জোটের দখলে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই সুবিধা বেশি বড় জায়ের। তবে জয় নিয়ে দুই মহিলাই আশাবাদী। হাফিজা বিবির কথায়, “এলাকা ঘুরে মনে হচ্ছে, মানুষ তৃণমূলের পক্ষেই রায় দেবে।” কামারউন্নেসার দাবি, “এলাকার মানুষ পরিবর্তন চাইছে। তাই ভরসা আছে জোটের কাছ থেকে আসনটা ছিনিয়ে নিতে পারব।”
একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ করেন হাফিজা। কামারউন্নেসা গৃহস্থালির কাজ সামলান। সংসার সামলে রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে গ্রাম চষে ফেলছেন। একজনের স্বামী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, অন্য জনের স্বামী ব্যবসায়ী। সময় পেলে স্ত্রীদের সঙ্গে ঘুরছেন তাঁরাও। দুই জায়ের পরিবারে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭০। এই অবস্থায় চিন্তিত পরিবারের ভোটাররা। কি করবেন, কাকে ভোট দেবেন? |