|
|
|
|
বাধা-বিঘ্ন সরিয়ে টান পড়ল মহিষাদলের রথে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পঞ্চায়েতের নির্বাচনের গেরোয় রথের মেলা আদৌ হবে কি না তা নিয়েই ছিল জল্পনা। শেষমেশ বিপুল উৎসাহে অন্য বারের মতোই সাড়ম্বরে পালিত হল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের ২৩৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা ও লোক উৎসব।
বুধবার দুপুরে রথতলা থেকে গুন্ডিচা বাটি পর্যন্ত পরিক্রমা করে ১৩ চূড়া বিশিষ্ট রথ। পালকি চেপে এসে রথের রশি টেনে রথের সূচনা করেন রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ। সঙ্গে ছিলেন শৌর্যপ্রসাদ গর্গ। এ ছাড়াও ছিলেন, হলদিয়ার মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর, বিডিও প্রদ্যুৎকুমার পালই প্রমুখ।
১৭৭৬ সালে মহিষাদলের রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায় রানি জানকীর অনুরোধে এই দিনেই রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন। দিনে দিনে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তা। প্রতিবারেই মেলার ভিড়ে উপচে পড়ে গোটা এলাকা। কিন্তু এ বারে পঞ্চায়েতের নির্ঘণ্ট এলোমলো করে দিয়েছিল মেলার ভবিষ্যৎ। রাজবাড়ি রথের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও এত দিন পঞ্চায়েত সমিতিই ছিল মেলা পরিচালনার দায়িত্বে। তাই সমিতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।
এ দিন সকাল থেকেই এলাকার সিনেমা মোড়, রাজবাড়ির ছোলাবাড়ি প্রাঙ্গণ, কলেজ রোডে ভিড় জমতে থাকে। দুপুরের স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিড়ের মাত্রা আরও বাড়ে। তবে গত বারের তুলনায় ভিড় কিছু কমই হয়েছে বলে এলাকাবাসীর মত। অবশ্য অন্য জায়গার তুলনায় মহিষাদলের এই রথের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান একটু ভিন্ন। রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা বদলে রাখা হয় মদনমোহন জিউকে।
রথের রশিতে টান পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জমে উঠেছে মেলা। প্রায় এক মাস চলে এই মেলা। কলেজ রোডের দু’ধার দিয়ে বসেছে নানা দোকানের সারি। ছোলাবাড়ির একাংশে বসেছে নাগরদোলা, মনোহারি, বেতের দোকান। অন্যান্য বারের মতো এ বারও বিপুল পরিমাণ মানুষ এসেছেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া-সহ অন্যান্য জেলা থেকে। সম্প্রতি বুদ্ধগয়ায় জঙ্গি নাশকতার পরে নিরাপত্তার ব্যপারে সজাগ প্রশাসন। তল্লাশিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে ডিআইবি-র বম্ব ডিসপোসাল স্কোয়াডের কর্মীদেরও। তবে মেলায় অস্বস্তি বাড়িয়েছে বহু বছর ধরে চলে আসা এক শ্রেণির উশৃঙ্খল যুবকদের দাপট। রথতলা থেকে গায়ে কাদা মেখে ভিড়ের মাঝে হইচই করে তারা দৌড়তে থাকায় চূড়ান্ত নাকাল হয়েছেন মানুষ। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির কথায়, “এটা ঐতিহ্য হওয়ায় কিছু বলা যায় না ওদের। মাত্রা ছাড়ালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হত।” হলদিয়ার মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর জানান, “সুষ্ঠু ভাবেই রথ এগিয়েছে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় প্রশাসনিক তৎপরতা একটু বেশিই নিতে হয়েছে।”
রথযাত্রায় মেতেছে কাঁথি শহর-সহ পুরো মহকুমাই। কাঁথি-৩ ব্লকের প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন বাহিরী ও রামনগর-২ ব্লকের ডেমুরিয়ায় আড়াইশো বছরের পুরনো রথের মেলায় ভিড় জমে যায় দুপুর থেকেই। ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা শহরের রাস্তায় নানা আকারের রথ নিয়ে বেরয়।
এ দিকে, ভোটের জন্য রথের মেলা পিছিয়েছে দাসপুর থানার খাঞ্জাপুরে। শতাধিক বছরের পুরনো এই রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে খাঞ্জাপুর হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায়। এবার পঞ্চায়েত ভোটে খাঞ্জাপুর হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র হয়েছে। তাই এলাকাটি এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে। অগত্যা আগামী রবিবার মেলা হবে বলে ঠিক হয়েছে। উল্টো রথের মেলা যেমন বসত তেমনই বসবে। মেলা কমিটির পক্ষে শ্রীরাম মণ্ডল বলেন, “ভোটের জন্য মেলা পিছোতে হয়েছে। আমরা তা প্রচারও করে দিয়েছি। যাতে কেউ এসে ফিরে না যান।” |
|
|
|
|
|