আচ্ছা, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি শেষ কবে বড় কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরেছে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি— ধোনির ভারতই সব জিতেছে। এমনি এমনিই তো ধোনির চওড়া কপাল নিয়ে এত লেখালেখি হয়নি!
বৃহস্পতিবারের শ্রীলঙ্কা-ভারত ফাইনাল নিয়ে লিখতে বসে তাই ধোনির টিম ইন্ডিয়াকে এগিয়ে না রেখে পারছি না। শুধু ধোনির ‘লেডি লাক’ নয়। ফাইনালে ভারতের উপর বাজি ধরার আরও তিনটে কারণ আছে।
এক, ক্যাপ্টেন কুল টিমে ফিরে আসার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার ম্যাচ শুরুর আগেই শুনলাম বিরাট কোহলি বলল, ভারত ফাইনালে উঠলে ধোনি খেলবে। এই তরুণ দলটা যে ভাবে ধোনিকে সামনে রেখে, ওকে আদর্শ মেনে এগিয়ে চলে, সেটা মাথায় রাখলে এমএসডির প্রত্যাবর্তন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বুঝতে পারবেন। ধোনি থাকলে টিমটা একটা বাড়তি জোশ নিয়ে ফাইনালে নামবে।
দুই, মঙ্গলবারের নাটকীয় জয়। ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে আবার যখন শুরু হল, তখন ভারতে রাত প্রায় দুটো। শ্রীলঙ্কা ইনিংসের পরের দিকটা তাই আমি আর দেখতে পারিনি। সকালে উঠে ওয়েবসাইটে যখন দেখলাম ভারত ৮১ রানের ও রকম বিশাল ব্যবধানে জিতেছে, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। শ্রীলঙ্কা ৯৬ অল আউট! আর পুণে ওয়ারিয়র্সে যে ছেলেটাকে এত কাছ থেকে দেখেছি, সেই ভুবনেশ্বর কুমার আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে সেরা বোলিংটা করেছে। ৬-১-৮-৪।
এ ভাবে বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে ওঠা যে কোনও টিমের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বিশেষ করে যদি ফাইনালেও সামনে থাকে সেই এক টিম, দু’দিন আগে যাদের বিরুদ্ধে এত বড় জয় এসেছে।
তিন, শ্রীলঙ্কার ক্লান্তি। ত্রিদেশীয় সিরিজের অদ্ভুত নিয়মের ব্যাপারে আগের কলামেই লিখেছি। যে নিয়মে শ্রীলঙ্কাকে ছ’দিনে তিনটে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। তার মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ভারতের বিরুদ্ধে মঙ্গলবারের ম্যাচের মধ্যে ওরা একটা দিনও বিশ্রাম পায়নি। মঙ্গলবার সারা দিন খেলে একটা দিন বিশ্রাম, তার পরই ফাইনাল। ক্লান্তি যে শ্রীলঙ্কাকে প্রভাবিত করবে, সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। |
ফাইনালেও ধোনির সেরা বাজি হয়তো ভুবি। পোর্ট অব স্পেনে বুধবার। ছবি: এপি |
সব মিলিয়ে তাই মনে হচ্ছে, আরও একটা কাপ উঠতে চলেছে ধোনির হাতে। তবে একটা ছোট আফসোস থেকেই যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই নিয়ে প্রচুর ম্যাচ খেলে ফেলল ভারত-শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেট ওয়েবসাইটে এটা নিয়ে বেশ ইয়ার্কি-ঠাট্টাও চালু হয়ে গিয়েছে। সত্যিই, এই দুটো টিমকে পরপর খেলতে দেখাটা যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমীর পক্ষে একটু ক্লান্তিকর। এর চেয়ে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনাল হলে মনে হয় ম্যাচটা আরও উপভোগ্য হত। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমটাও বেশ আকর্ষণীয়। ক্রিস গেইল তো আছেই। সঙ্গে আছে পোলার্ড, ব্র্যাভোদের মতো ‘এক্সাইটিং’ ক্রিকেটার। ক্যারিবিয়ানদের জন্য একটু দুঃখও হচ্ছে। কারণ এই ছোট সিরিজটায় ওরা ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছিল।
|
ধোনির ফাইনাল-ভাগ্য
আজ ফাইনাল ভারত-শ্রীলঙ্কা পোর্ট অব স্পেন (সন্ধ্যা ৭-০০) |
মোট ১১ ম্যাচে ৭ জয় ৪ হার |
• ২০০৭ জোহানেসবার্গ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ভারত জেতে ৫ রানে।
• ২০০৮ মার্চ সিডনি ত্রিদেশীয় সিরিজ প্রথম ফাইনাল প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ভারত জেতে ৬ উইকেটে।
• ২০০৮ মার্চ ব্রিসবেন দ্বিতীয় ফাইনালে ভারত জেতে ৯ রানে।
• ২০০৮ জুন ঢাকা কিটপ্লাই কাপ প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ভারত হারে ২৫ রানে।
• ২০০৮ জুলাই করাচি এশিয়া কাপ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারত হারে ১০০ রানে।
• ২০০৯ সেপ্টেম্বর কলম্বো কমপ্যাক কাপ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারত জেতে ৪৬ রানে।
• ২০১০ জানুয়ারি মীরপুর ত্রিদেশীয় সিরিজ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারত হারে ৪ উইকেটে।
• ২০১০ জুন ডাম্বুলা এশিয়া কাপ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারত জেতে ৮১ রানে।
• ২০১০ অগস্ট ডাম্বুলা ত্রিদেশীয় সিরিজ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারত হারে ৭৪ রানে।
• ২০১১ এপ্রিল মুম্বই বিশ্বকাপ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারত জেতে ৬ উইকেটে।
• ২০১৩ জুন বামির্ংহ্যাম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ভারত জেতে ৫ রানে।
|
ভারত কেন এগিয়ে... |
• ধোনির সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন।
• ২৪ ঘণ্টা আগে শ্রীলঙ্কার বড় রানে হার।
• শ্রীলঙ্কার ছ’ দিনে তিন ম্যাচ খেলার ক্লান্তি।
|
|
|