ভারী বুটের শব্দ নিয়ে এল ভোট
গাঁ-গঞ্জে সমর্থন কেমন, আজ পরীক্ষা সিপিএমের
পাখির চোখ লোকসভা নির্বাচন। তার আগে আজকের পঞ্চায়েত ভোট যেন সেমিফাইনাল। এক দিকে পরিবর্তনের বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে মরিয়া তৃণমূল। অন্য দিকে সিপিএমের কাছে এই লড়াই অস্তিত্ত্ব রক্ষার।
বাংলার রাজনীতিতে বরাবরই শিরোনামে পশ্চিম মেদিনীপুর। সেই ১৯৯৮-’৯৯ থেকে কখনও গড়বেতা-কেশপুর, কখনও সবং- পিংলা। আর সাম্প্রতিক কালে লালগড়, বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড় এক কথায় জঙ্গলমহল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। এই জেলাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কোনওক্রমে তিনটি লোকসভা কেন্দ্র দখলে রাখতে পেরেছিল সিপিএম। দু’বছর পরে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলা জুড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যায়ে সিপিএম। একদা ‘লালদুর্গে’ সবুজের রমরমা শুরু তখন থেকেই। সেই দাপট দেখা যাচ্ছে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটেও।
চোখ রাখা যাক মনোনয়ন-পর্বে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৮৮২টি (গ্রাম পঞ্চায়েত ৭৩৬, পঞ্চায়েত সমিতি ১৪১, জেলা পরিষদ ৫) আসনে বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জিতেছিল তৎকালীন শাসক সিপিএম। এ বার পুরো উল্টো ছবি। ১ হাজার ৭৯টি (গ্রাম পঞ্চায়েত ৯৪৬, পঞ্চায়েত সমিতি ১৩৩) আসনে কোনও প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। হাতেগোনা কিছু আসন বাদে সবেতেই জিতেছে তৃণমূল। যে আসনগুলিতে লড়াই হবে, তার পূর্বাভাস জানাতে অবশ্য কোনও পক্ষই রাজি নয়। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত দু’পক্ষই তাই কৌশলী।
জেলা পরিষদের ক্ষমতা কি আদৌ ধরে রাখা যাবে?
ভোটকেন্দ্রের পথে। মেদিনীপুর সদর ব্লকে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “অনিশ্চয়তা-নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ভোট হচ্ছে। আগে নির্বাচন হোক। তারপর যা বলার বলব।” জেলা পরিষদে কতগুলো আসন পেতে পারে তৃণমূল? ৬৭টির মধ্যে অন্তত ৫০-৫৫টি? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “যে সব জেলায় পঞ্চায়েতে আমাদের ভাল ফল হবে, আমাদের জেলা তার মধ্যেই থাকবে। প্রথম সারিতে।”
জেলায় এ বার দু’দফায় প্রচারে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ-পাঁচটি সভা করেছেন। এসেছেন হেভিওয়েট মন্ত্রী-সাংসদরা। সিপিএম অবশ্য একটি জনসভাও করেনি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচারও তেমন হয়নি। অবস্থা এমন যে জেলার নানা অংশে দলীয় কর্মীদের নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সভা করতে হয়েছে গোপনে। এক এলাকার সভা হয়েছে অন্যত্র। এ জন্য শাসকদলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছেন বাম নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের ত্রি-স্তরের অন্তত ৪৫ জন বাম প্রার্থী ঘরছাড়া। অন্তত ১২০ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। অর্থাৎ, এলাকায় থাকলেও প্রচারে বেরোতে পারেননি। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন এঁদের বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিপিএমের সাংগঠনিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা গড়বেতা-কেশপুরের ছবি থেকেই পরিষ্কার। যে গড়বেতা থেকে গত বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছিলেন সুশান্ত ঘোষ, যে কেশপুর ওই নির্বাচনেই জয়ী হন রামেশ্বর দোলুই, সেখানে এ বার প্রধান বিরোধী দল সিপিএমকে দূরবীন দিয়ে খোঁজার দশা। গড়বেতা-১ ব্লকে সিপিএমের প্রার্থীর সংখ্যা সাকুল্যে ৬ জন। জেলা পরিষদে ৩, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩ জন। আর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬২টি আসনের মধ্যে একটিতেও তাদের প্রার্থী নেই। অন্য দিকে, কেশপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩০টি আসনের মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী রয়েছে মাত্র ২টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতিতে ১ জন এবং জেলা পরিষদে ৩ জন। অর্থাৎ, এখানেও প্রার্থী সাকুল্যে ৬ জন।
সিপিএমের এই কোণঠাসা দশাতেও কিন্তু স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। তাদের ভাবাচ্ছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তৃণমূলের প্রতীক না পেয়ে অনেকেই নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। এমন প্রার্থীর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। সব মিলিয়ে প্রায় তিনশো। এই অবস্থায় সুযোগ বুঝে দলের কর্মীদেরও নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে সিপিএম। এমন প্রার্থী দু’শোর কাছাকাছি। প্রচারে দলীয় নেতৃত্ব তাঁদের বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রগতিশীল প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন।
বিরোধী দলের নিরিখে কিছু এলাকার ভোটের গুরুত্বও রয়েছে। যেমন, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগড়, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার নির্বাচনী এলাকা সবং, বিদায়ী সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের নির্বাচনী এলাকা পিংলা নজরে থাকছে। সবং কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি বলেই পরিচিত। একই ভাবে নারায়ণগড়- পিংলায় সিপিএম এক বছর আগের থেকে এখন ভাল অবস্থায় রয়েছে। সংগঠন কিছুটা গুছিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে কি না, পড়লে তা কতটা, সেটাই দেখার।
গড়বেতা-কেশপুর-লালগড়, ক্রমান্বয়ে এই জেলার নানা ঘটনা তৃণমূলকে অক্সিজেন জুগিয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই জেলায় এখনও ‘নিরঙ্কুশ’ হতে পারেনি তৃণমূল। এ বার কি শাসকদলের সেই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে? ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ এবং জেলা পরিষদ দখল করতে পারবে তৃণমূল? জবাবের অপেক্ষায় জঙ্গলমহলের জেলা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.