আশা-নিরাশার দোলাচোলে সিঙ্গুর। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি টাটার আইনজীবীদের পর্যাপ্ত অর্থের বিনিময়ে জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব কিনা ভেবে দেখতে বলেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ অগস্ট। এ কথা শুনে সিঙ্গুরের কিছু জমিহারা পরিবার ফের আশায় বুক বাঁধছে।
বাজেমেলিয়ার দিলীপ কোলে বুধবারই গরু চরাতে এসেছিলেন টাটাদের প্রকল্প এলাকায়। তাঁর পারিবারিক আট বিঘে জমির পুরোটাই গিয়েছে টাটাদের প্রকল্প এলাকায়। মাঝে সাতটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। দুই মেয়ে, এক ছেলে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে ভ্যানও চালিয়েছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নে কিছুটা আশাবাদী তিনি। বললেন, “কিডনিতে পাথর হয়েছিল। এখন আর সেভাবে ভ্যান চালাতে পারছি না। মাস গেলে রাজ্য সরকারের ২০০০ টাকা ও চাল পাই। বিপিএল তালিকার আটা ও চিনি পাচ্ছি। প্রয়োজনে খেতমজুরি করি। আজও জমি ফেরতের আশা রাখি।”
গোপালনগরের অশোক মৈত্র খ্যাপলা জাল নিয়ে মাছ ধরতে এসেছিলেন টাটাদের প্রকল্প এলাকায়। তিনি কথায়, “মামলা যখন হয়েছে, এখন পরের হাতে ধন। এক বিঘে জমি গিয়েছে। জমি ফেরতের জন্য দিল্লি পর্যন্ত দরবার করেছি। তবে এখনও জমি ফেরতের আশা রাখি।”
তবে উল্টো সুরও শোনা যাচ্ছে সিঙ্গুরে কান পাতলে। কামারকুণ্ডুর অশোক মাঝির আফশোস, “আট বিঘে জমি নিয়েছে টাটাদের প্রকল্পে। টাকা নিয়ে নিলেই ভাল হত।”
বাজেমেলিয়ার তন্ময় মাঝি উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর তিন বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন হাওড়ার দাশনগরে। চাকরিও পেয়েছিলেন প্রকল্প এলাকায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নও তাঁর হতাশা ঢাকতে পারে না। গলায় ঝরে পড়ে অভিমান, “এত দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে কী হল? প্রকল্প এলাকায় চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু টাটারাই চলে গেল। কারখানা হলে এলাকার চেহারাটাই বদলে যেত। ওরা একবারও বুঝল না।”
অন্ধকার কেটে আলো উঠবে কিনা, সময়ই বলবে। |