সূর্য ডোবার পরে যদি আরামবাগ-তারকেশ্বর রাস্তা উজিয়ে বিরাটিতে যাওয়া যায়, তা হলে চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশে কিছু আলো-আধাঁরি গুমটিকে ঘিরে মানুষের ভিড়। একটি লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, ওই ভিড়ের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে চোলাই মদ।
২০১১ সালের শেষ দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২০০ জনের। তারপর সারা রাজ্যে শুরু হয়েছিল তল্লাশি। ভাঙা হয়েছিল অসংখ্য চোলাইয়ের ঠেক। কিন্তু কিছু দিন পরে সব থিতিয়ে যায়। আবার রমরমিয়ে শুরু হয় চোলাই ব্যবসা। আরামবাগ মহকুমার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই অবাধে বিকোচ্ছে ‘পেপসি’ বা ‘চিকচিকি’ (চোলাই মদের স্থানীয় নাম)।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তাঁদের অভিযোগ, সব জেনেও চুপ করে রয়েছে প্রশাসন। শাসক দলের স্থানীয় দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও চোলাই ব্যবসায়ীদের প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কী বলছে প্রশাসন?
আরামবাগের এসডিও অরিন্দম রায় ও এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র জানিয়েছেন, পুলিশকে অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে। মহকুমা আবগারি দফতরের দুটো সার্কেল। আরামবাগ ও খানাকুল। আরামবাগের মধ্যে রয়েছে আরামবাগ ব্লক ও গোঘাটের দু’টি ব্লক। খানাকুলের মধ্যে রয়েছে, খানাকুলের দু’টি ব্লক ও পুড়শুড়া ব্লক। আরামবাগ সার্কেলে কোনও ওসি না থাকায় খানাকুলের ওসি রামকৃষ্ণ গিরিই রয়েছেন আরামবাগের দায়িত্বে। তিনি বলেন, “আরামবাগের দায়িত্ব থাকায় আমাকে তিন দিন করে ভাগ করে দু’টি সার্কেলে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে কোথাও অভিযান চালালে সেই জায়গায় দ্বিতীয়বার যেতে কয়েক মাস সময় চলে যাচ্ছে। তার মধ্যেই সেই জায়গায় ফের বেআইনি মদের কারবার শুরু হয়ে যায়।”
মহকুমা আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ৬টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৭৫০টি গ্রামে নিয়মিত চোলাই মদের ভাটির বিরুদ্ধে অভিযোন চালানোর মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও তাঁদের নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে ঘুরে ঘুরেও বিক্রি হয় চোলাই মদ। চোলাই মদের ঠেক মহকুমার প্রায় সব গ্রামেই থাকলেও বেশি রয়েছে, আরামবাগের বাতানল, গৌরহাটি, সালেপুর, নৈসরাই, হরিণখোলা, বিরাটি, গোঘাটের মথুরা, হাজিপুর, বদনগঞ্জ, কোকন্দ, কুমুড়শা, পুড়শুড়ার রাউতাড়া, সোদপুর, মসিনান, শ্যামপুর, খানাকুলের নতিবপুর, মাড়োখানা, বালিপুর, পোল, পাতুল, ঘোষপুর প্রভৃতি গ্রামে। সম্প্রতি আরামবাগ-তারকেশ্বর রাস্তার পাশের চোলাইয়ের ঠেকে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু অবস্থা বদলায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চোলাই আসক্তদের কারণে সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হতে সমস্যা হয়। বাড়ছে চুরি ছিনতাইও। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে চোলাই ঠেক ভেঙ্গে দেবার উদ্যোগ নিলেও তৃণমূল কর্মীরা প্রত্যক্ষ ভাবে উচ্ছেদে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিনয় সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “বিরাটির মোড়ের কাছে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের ২০০ মিটার দূরে একটি চোলাই মদের ঠেক আমরাই দু’বার ভেঙ্গেছি। কিন্তু তারপরেও ওই ঠেক এখনও চলছে। কী ভাবে চলছে, সেটাই বুঝতে পারছি না।” |