হাওড়ায় অভিযুক্ত শাসক দল
কংগ্রেস বিধায়কের মাথা ফাটলো লাঠির আঘাতে
মাথায় ব্যান্ডেজ। রীতিমতো টলছেন প্রবীণ বিধায়ক। সঙ্গীদের কাঁধে হাত রেখে কোনও মতে বলছেন, “আমি বিধায়ক। অথচ, ওরা এলাকাতেই ঢুকতে দিল না!”
পঞ্চায়েত ভোটের প্রথম দফার এক দিন আগে, বুধবার হাওড়ার জয়পুরে কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের মাথা ফেটেছে লাঠির ঘায়ে। চোখের নীচেও চোট লেগেছে। তিনি রওনা হয়েছিলেন জয়পুরের কাশমুলি পঞ্চায়েত এলাকার উত্তরবাঁধ গ্রামের উদ্দেশে। আগের সন্ধ্যায় সেখানে শাসক দলের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএমের। পুড়েছে বাড়ি। তবে সেখানে ঢোকার আগেই তৃণমূলের লোকজন আমতার বিধায়ককে ঘিরে তাঁর ওই দশা করে বলে অভিযোগ। সিপিএমের এক প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিধায়ককেও গ্রামে ঢুকতে না দিয়ে হেনস্থা করায় অভিযুক্ত শাসক দল। তৃণমূল অবশ্য কোনও অভিযোগই মানেনি।
অসিতবাবুর উপরে হামলার কথা জানাতে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে। প্রদীপবাবু পরে বলেন, “রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে দ্রুত অবনতি হচ্ছে, তা রাজ্যপালকে বলেছি। কী সন্ত্রাসের মধ্যে রাজ্যে ভোট হচ্ছে, সেটাও জানিয়েছি।” ঘটনার প্রতিবাদে আজ, রাজ্য জুড়ে (যে তিন জেলায় ভোট রয়েছে, তা বাদে) ‘কালা দিবস’ পালন করবে কংগ্রেস। কালো ব্যাজ পরে থানায় বিক্ষোভও দেখাবেন দলের কর্মীরা। বুধবার দুপুরে মহাকরণের সামনে এক দল কংগ্রেস সমর্থক বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ ২১ জনকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে আচরণবিধি ভাঙছেন, শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছেন এবং সংবিধান-বিরোধী কথা বলছেন, তারপরে এই পরিস্থিতির দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।” বিমানবাবুর মন্তব্য, “সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।” ভোট চলাকালীন নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের, এই প্রশ্নে বিমানবাবুর জবাব, “রাজ্য সরকার যদি কমিশনকে শত্রু হিসাবে দেখে, তাদের সঙ্গে সহযোগিতাই না করে, তা হলে আর কী হতে পারে?” দলের নেতাদের ‘হেনস্থা’র প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার হাওড়া জুড়ে ‘ধিক্কার দিবস’-এর ডাক দিয়েছে সিপিএম।

আমি বিধায়ক। অথচ,
ওরা এলাকাতেই
ঢুকতে দিল না!
অসিত মিত্র,

উনি পড়ে গিয়ে অটোর
রডে চোট পেয়েছেন।
কেউ ওঁকে মারেনি।
অরূপ রায়,
কী হয়েছিল জয়পুরে? মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তেতে ওঠে উত্তরবাঁধ গ্রাম। তৃণমূল গ্রামে মিছিল করে। তাদের দাবি, বিরোধীরা একজোট হয়ে সেই মিছিলে আক্রমণ করে। কংগ্রেস এবং সিপিএমের পাল্টা দাবি, মিছিল থেকে হামলা চালানো হয় তাদের উপরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মুড়ি-মিছরির মতো গ্রামে বোমা পড়ে। মারপিট হয় দফায় দফায়। অন্তত ৪০টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। তাণ্ডব চললেও দীর্ঘ ক্ষণ পুলিশের দেখা মেলেনি। পৌঁছয়নি দমকলের ইঞ্জিন।
আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের দেখতে এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ উত্তরবাঁধ গ্রামের দিকে রওনা দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মোহন্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক রবি মিত্র। সঙ্গে থাকা সিপিএম কর্মীরা একটি মিনি-ট্রাকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সিপিএম নেতারা। অভিযোগ, গ্রামে ঢোকার মুখেই গাড়ি আটকায় তৃণমূলের লোকজন। বাধা পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া মোহন্তবাবু পরে বলেন, “দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। তৃণমূলের লোকজন গাড়ি ঘিরে ধরে হেনস্থা করেছে।”
মোহন্তবাবুরা বেরোনোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই একটি অটোয় চেপে সেখানে পৌঁছন অসিতবাবু। তখনও জটলা গ্রামের বাইরে। পুলিশ ছিল না সেখানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অসিতবাবুকে ঘিরে ফেলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বলা হতে থাকে, ‘উস্কানি দিতে গ্রামে ঢোকা চলবে না’। অসিতবাবু বলেন, “বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটলে সেখানে যাওয়া আমার কর্তব্য।” কিন্তু বিধায়কের এই যুক্তি কাজে আসেনি। ভিড়ের মধ্যে থেকে লাঠির ঘা মারা হয় অসিতবাবুর মাথায়। রক্তাক্ত বিধায়ককে অমরাগড়ি বি বি ধর হাসপাতালে নিয়ে যান দলের কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অসিতবাবুকে পাঠানো হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
জয়পুরের পোড়া বাড়ি। ছবি: সুব্রত জানা
গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা সুনসান। গ্রামের বাইরে জায়গায়-জায়গায় তৃণমূল কর্মীদের জটলা। যাঁদের বাড়ি পুড়েছে, তাঁরাও ধারেকাছে ঘেঁষছেন না। তাঁদেরই এক জন মানকুমার খান জানালেন, তিনি কংগ্রেস সমর্থক। তাঁর অভিযোগ, “কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ ছিল। তা না মানায় বাড়িতে আগুন লাগানো হয়।”
অসিতবাবুকে মারধরের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে তৃণমূল। হাওড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “উনি পড়ে গিয়ে অটোর রডে চোট পেয়েছেন। আমাদের কেউ ওঁকে মারেনি।” ঘটনাস্থলে হাজির তৃণমূল নেতা হাফিজুল রহমানের গলাতেও ছিল একই সুর। বলেন, “সিপিএম নেতাদের সঙ্গেই গ্রামে ঢুকে উত্তেজনা ছড়াতে চাইছিলেন অসিতবাবুরা। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাঁদের ফিরে যেতে অনুরোধ করা হয়। তা নিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে অসিতবাবুর কথা-কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হয়। তিনি সে সময় পড়ে গেলে অটোর রডে লেগে মাথায় চোট পান। কেউ তাঁকে মারেনি।” সিপিএম নেতাদের ত্রাণের গাড়ি আটকানো প্রসঙ্গে অরূপবাবুর বক্তব্য, “সিপিএম নেতাদের গাড়িতে ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে বোমাও ছিল। পুলিশ তা আটকও করেছে।” তবে জেলা পুলিশের কর্তারা জানান, বোমা উদ্ধারের খবর তাঁদের কাছে নেই। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কংগ্রেস বিধায়ককে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে গ্রামে যেতে বলা হয়। কিন্তু তিনি পুলিশের অপেক্ষা না করেই গ্রামে যান।” অসিতবাবু পরে বলেন, “আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে যাই। বিনা প্ররোচনায় তৃণমূল আমাকে মারল। দলের লোকজন না বাঁচালে আজ কী হত, ভাবতে পারছি না!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.