মধুবনিতে জাল নোটের কুটির শিল্প
জঙ্গি গড়ছে দ্বারভাঙা,
জানালেন গোয়েন্দারা
বিহারের দ্বারভাঙ্গা-মধুবনি কি উত্তরপ্রদেশের আজমগড় হয়ে উঠছে!
বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মহলে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে হামলার পিছনেও রয়েছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দ্বারভাঙ্গা ‘মডিউল’ই।
অতীতে একটা সময়ে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে হামেশাই জড়িয়ে যেত উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের নাম। সেই সময়ে ভারতে কোনও বড়সড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেই গোয়েন্দাদের নজরদারিতে চলে আসত আজমগড়। বিভিন্ন সময়ে গা-ঢাকা দিয়ে থাকার জন্য এবং গোপন সন্ত্রাসবাদী ‘সেল’ তৈরির জন্য জঙ্গিরা ব্যবহার করত পূর্ব উত্তরপ্রদেশের এই জেলাকে।
২০০৭-০৮ এর পর থেকে ছবিটা ক্রমশ পাল্টে গিয়েছে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মহল।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, খোলামেলা নেপাল সীমান্তের সুযোগ নিয়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জঙ্গিরা সহজেই ঢুকে পড়ছে উত্তর বিহারের নেপাল লাগোয়া জেলা দ্বারভাঙ্গা এবং মধুবনিতে। সেখানে বিভিন্ন ‘মডিউল’ তৈরি করা থেকে শুরু করে জাল নোটের ‘হাব’ তৈরি করেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। ২০০৯ সালের অগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে জাভেদ সিদ্দিকি ওরফে ভিকি মানিহার। জেরায় ভিকির বয়ানেই প্রথম উঠে আসে দ্বারভাঙ্গা এবং মধুবনির নাম। ভিকি জানায়, কী ভাবে নেপাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনায়াসে ঢুকে পড়ছে জাল নোট থেকে জঙ্গি সংগঠনের নেতারা। ২০১০ সালের পুণে বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে বেঙ্গালুরু, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বইয়ের মতো শহরগুলিতে জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে দ্বারভাঙ্গা এবং মধুবনির নাম।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার কথায়, “দ্বারভাঙ্গায় জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ‘অপারেশনাল চিফ’ ইয়াসিন ভটকল। ২০১১ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের আগে প্রায় এক বছর দ্বারভাঙ্গার একটি গ্রামে ছিল ইয়াসিন। এমনকী, ওই গ্রামের কাছেই বিস্ফোরণের মহড়াও করে ইয়াসিনরা।” কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ইয়াসিন দ্বারভাঙ্গায় আসে ইউনানি চিকিৎসকের পরিচয় দিয়ে। কিছু দিনের মধ্যেই সেখানকার চটপটে কয়েক জন যুবককে চিহ্নিত করে দল গড়ার কাজ শুরু করে ইয়াসিন। ওই গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, “গত দু’বছরে ভারতে বিভিন্ন বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনই দ্বারভাঙ্গার।”
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, দ্বারভাঙ্গা যদি সন্ত্রাসবাদী তৈরির পীঠস্থান হয়, তবে মধুবনি হচ্ছে জাল নোট কারবারের প্রধান কেন্দ্র। দুবাইয়ে তৈরি জালনোট বিমানে পৌঁছচ্ছে কাঠমান্ডুতে। সেখান থেকে নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে তা ঢুকছে ভারতে। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “মধুবনির কিছু গ্রামে জাল নোট বিক্রির কারবার প্রায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই জড়িয়ে পড়েছেন ওই ব্যবসায়। সারা দেশে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ছে মূলত মধুবনি থেকেই।”
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, দ্বারভাঙ্গার ১৩ জন ধরা পড়লেও ওই মডিউলের প্রায় ১০ জন এখনও অধরা। তার মধ্যে ইয়াসিন ভটকল ছাড়াও রয়েছে ১৩/৭ মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত আসাদুল্লা আখতারও। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ইয়াসিন ভটকল-সহ দ্বারভাঙ্গা মডিউলের জঙ্গিরাই বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণে যুক্ত।
গোয়েন্দারা বলছেন, ২০০৮ সালে আমদাবাদ বিস্ফোরণের সঙ্গে বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণের মিল রয়েছে। সেখানেও একই কায়দায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়েছিল। বিস্ফোরক রেখে আসার কাজে স্থানীয় কয়েক জনকেই ব্যবহার করে জঙ্গিরা।
কিন্তু কেন বুদ্ধগয়া?
গোয়েন্দাদের সন্দেহ, মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে হামলার বদলা নিতেই এই হামলা। গোয়েন্দাদের দাবি, গত অক্টোবরে ধৃত দুই জঙ্গি জেরায় জানিয়েছিল, রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে হামলার বদলা নিতে বুদ্ধগয়াকে টার্গেট করতে পারে জঙ্গিরা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দু’জন জঙ্গি অনুপ্রবেশের খবর পাঠানো হয়েছিল বিহার পুলিশকে। কিন্তু তিন দিন কেটে যাওয়ার পরও পুলিশ তাদের গতিবিধি ধরতে পারেনি। এর পরেই একটি সূত্রে পটনা পুলিশের কাছে খবর আসে, এক জঙ্গি বুদ্ধগয়ায় গিয়েছে। বিষয়টি গয়া পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু সার্বিক ভাবে বিহার পুলিশ ওই জঙ্গির খোঁজে তল্লাশি-অভিযান কেন শুরু করল না, তা নিয়ে ধন্দে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.