রেস্তোরাঁ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিন বন্ধু। পথে ট্রেলারের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেল তাঁদের গাড়ি। তিন জনই দীর্ঘক্ষণ আটকে রইলেন ভিতরে। পরে পুলিশ গিয়ে গাড়ি কেটে তাঁদের উদ্ধার করে। তত ক্ষণে তিন জনেরই মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত তিন জনের নাম সুরজিৎ রায় (৩০), বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৮) ও বিপ্লব চক্রবর্তী (৩৪)।
পুলিশ সূত্রের খবর, বরাহনগর থানার আলমবাজার এলাকায় সূর্য সেন রোডের বাসিন্দা সুরজিতের গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। ওই রাতে তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে দুই বন্ধু, বেলঘরিয়ার সতীনপল্লির বিশ্বজিৎ ও শ্রীকৃষ্ণনগরের বিপ্লবকে নিয়ে রাজারহাটের দিকে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, সুরজিৎ স্কুল ও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় গাড়ি ভাড়া দিতেন। পাওনা টাকা আনতেই রাজারহাটে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ডানকুনি-শিয়ালদহ সিসিআর ব্রিজের কাছে ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশ জানায়, গাড়িতে চালক সুরজিৎ ও বিপ্লব পাশাপাশি বসেন। পিছনে বিশ্বজিৎ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সিসিআর ব্রিজের কাছে পৌঁছন তাঁরা। ব্রিজের কিছুটা দূরেই একটি রাস্তা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বরাহনগর সতীন সেন নগরের দিকে নেমে গিয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে ফিরলে খুব কম সময়ে ডানলপে পৌঁছনো যায়। না হলে দক্ষিণেশ্বর ঘুরে ডানলপে যেতে অনেক বেশি সময় লাগে। |
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই তিন জন গাড়ি নিয়ে সতীন সেন নগর দিয়ে ডানলপে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু রাতে ভুল করে তাঁরা কিছুটা এগিয়ে যান। পরে ভুল বুঝতে পেরে তাঁরা গাড়ি ঘুরিয়ে ওই রাস্তা দিয়েই ফের সতীন সেন নগরের দিকে রওনা হন। তখনই উল্টো দিক থেকে আসা একটি দশ চাকার ট্রেলারের সঙ্গে সুরজিৎদের গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধাক্কার চোটে ট্রেলারের নীচে ঢুকে গিয়ে গাড়িটি পুরো দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী অন্য লরিচালকেরা ডানলপ মোড়ের টহলদারি পুলিশকর্মীদের বিষয়টি জানান। বরাহনগর থানার পুলিশ গিয়ে দোমড়ানো-মোচড়ানো গাড়িটিকে থানায় নিয়ে আসে। গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়িটি কেটে উদ্ধার করা হয় সুরজিৎ, বিশ্বজিৎ ও বিপ্লবকে। বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে ট্রেলারটি এক্সপ্রেসওয়েতে ফেলে রেখে চম্পট দেন চালক। দুর্ঘটনায় ট্রেলারটিরও ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সকালে ওই তিন যুবকের প্রত্যেকের বাড়ির সামনেই দেখা গেল প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছেন। “একটা মাত্র ছেলে, সে-ও চলে গেল,” আক্ষেপ থামছিল না সুরজিতের বাবা স্বপনবাবুর। প্রতিবেশীরা জানালেন, মাসখানেক পরেই সুরজিতের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বেলঘরিয়ার সতীন পল্লির বাসিন্দা, পেশায় ডেকরেটার্সের ব্যবসায়ী বিশ্বজিতের বাড়িতেও জটলা করেছিলেন আত্মীয়, পড়শিরা। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। পেশায় ইলেট্রিক মিস্ত্রি বিপ্লবের বাড়িতে বাবা নারায়ণ চক্রবর্তী অসুস্থ। ছেলের মৃত্যুর কথা তাঁকে জানানো হয়নি। ছেলে বাড়ি ফিরছে না কেন, জানতে চাইছিলেন তিনি। |