বেহাল ঢাকুরিয়া উড়ালপুল
সেতুর নীচেই জলাভূমি ছিল কি, জানতে সমীক্ষা
ঞ্চাশ বছর আগে তৈরি নকশায় ঢাকুরিয়া সেতুর নীচে শালবল্লার কাঠামোর সন্ধান পেলেন বিশেষজ্ঞেরা। সম্প্রতি ওই সেতুর উপরে একটি অংশে ধস নামায় রাস্তা বসে যায়। তার পরেই ওই সেতুর হাল দেখতে যান কেএমডিএ, পুরসভা, কেআইটি ও রাইটস্-এর পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা। প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়, পাশে থাকা ভ্যাটের ইঁদুর সেতুর নীচের মাটি খেয়ে সেতুকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাতেই ওই বিপত্তি। তার পরেই সেখান থেকে ভ্যাট সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। মঙ্গলবার ফের ওই সেতুর সমীক্ষা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা রাইটস্।
সেতুটি তৈরি করেছিল ‘কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ (কেআইটি)। কী ভাবে ওই সেতুর হাল ফেরানো যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাইটস্-কে সমীক্ষা করার বরাত দিয়েছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সেতুর একটি অংশ বসে যাওয়ার পরেই রাইটস্-কে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। প্রায় ২১ দিন হয়ে গেল। এখনও আমাদের কাছে সেই রিপোর্ট আসেনি।” তিনি জানান, পুরনো সেতু। দু’দিকের গার্ডার ধসে গিয়েছে। জায়গাটি কতটা ভরাট করতে হবে, তা জানা জরুরি। আগামী সাত দিনের মধ্যে ওই সংস্থাকে (রাইটস্) রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এর মধ্যে কেআইটি কর্তৃপক্ষ ওই সেতুর নকশা রাইটস্-এর হাতে দিয়েছেন। তা দেখেই বিশেষজ্ঞ-দল জানতে পারে, শুধু ইঁদুরের কারণেই ওই হাল হয়নি। সেতুর নীচে মাটি দুর্বল হওয়ার অন্য কোনও কারণ আছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
কী সেই কারণ?
পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “জলাভূমির উপরে কংক্রিটের কাজ করলে অনেক ক্ষেত্রে শালবল্লার কাঠামো (টিম্বার পাইলিং) করতে হয়।” অর্থাৎ, সেতু তৈরির আগে ওই এলাকা জলাভূমি ছিল কি না, এখন তা খুঁজতেই ব্যস্ত বিশেষজ্ঞেরা।
এর আগে জানা গিয়েছিল, সেতুর দেওয়ালের নানা অংশে ভিতরের জল বার হওয়ার জন্য গর্ত (উইপ হোল) রাখা হয়েছে। ভ্যাটের ওই গর্ত দিয়ে ভিতরের মাটি বার করে ইঁদুর নানা জায়গায় ঢুকে বংশ বৃদ্ধি করেছে। সেই কারণেই ভ্যাটটি অবিলম্বে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। কেন সেটা সরানো হয়নি? ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সিপিএমের মধুছন্দা দেব বলেন, “আশপাশে বেশ কিছু দোকান আছে। কথা হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও। জঞ্জাল ফেলার কন্টেনার রাখার পরিবর্ত জায়গা চূড়ান্ত করা যায়নি।” তবে শীঘ্রই ওটি সরানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে ফের ওই সেতু সমীক্ষা করেছে রাইটস্। ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (হাইওয়ে) তরুণ সেনগুপ্ত বলেন, “নকশা হাতে পেয়েছি। তা দেখে নেওয়ার পরেই সেতুর কোথায় কী আছে, দেখা হবে।” তিনি জানান, সেতুর নীচে কাঠামো কেমন, তা উপর থেকে বোঝা যায় না। নকশা ধরে সমীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যন্ত্র বসিয়ে, সেতুর নীচে মাটি কতটা শক্ত আছে, তা যাচাই করা হবে। এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভার ডিজি (রাস্তা) সৌমিত্র ভট্টাচার্য বলেন, “সেতুর নির্মাণ বিষয়ক বাকি নথিগুলির জন্য আমরা নির্মাতা সংস্থা কেআইটি-র সঙ্গে কথা বলেছি। সেগুলি হাতে পেলে রাইট্স- কে দেওয়া হবে।”
এ দিকে, ওই সেতু সারানোর কাজ চলাকালীন সেখান দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে বলে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দিয়েছেন। যদিও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তা সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সমীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সবিস্তার জানা যাবে।”
তবে বর্ষার মধ্যে ওই কাজ শুরু করা যে সম্ভব নয়, তা জানিয়ে দিয়েছেন একাধিক পুরকর্তা। এ দিকে, বর্ষা শেষ হতে না হতেই পুজোর মরসুম শুরু হবে। আর পুজোর আগে ওই ব্যস্ততম সেতুটি বন্ধ রাখতে একেবারেই রাজি নয় পুলিশ। পুলিশের এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক, যাদবপুর, গড়িয়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পড়ে ওই সেতুটি। ওই পথ ধরেই অনেক নামী পুজোর প্যান্ডেলে ভিড় করেন মানুষ। পুজোর সময়ে সেতু সারানোর কাজ হলে বিপাকে পড়বে ট্রাফিক পুলিশ।”
কবে থেকে শুরু হবে ওই সেতু সারানোর কাজ, তা নিয়ে স্বভাবতই দুশ্চিন্তায় রয়েছে পুলিশ। কিন্তু পুর-প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব ওই সেতু সারানোর কাজ শুরু করতে চায়। মঙ্গল ও বুধবার সমীক্ষার কাজ হলেই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর কাছে সমীক্ষার রিপোর্ট জমা দেবে রাইটস্। রাইটস্-এর জেনারেল ম্যানেজার তরুণবাবু বলেন, “ওই রাস্তায় এখন কোন ধরনের যান চলাচল করতে পারবে এবং কোন সময়ে চলবে, সে সবই বলা হবে রিপোর্টে।” ঠিক মতো মেরামতি করা গেলে পুরনো পদ্ধতিতে তৈরি সেতুটি আরও তিন দশক চলতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তা ছাড়া, ওই রাস্তায় অনেক রুটের বাস চলে। সারানোর আগে সে সব বাসগুলির কথা ভাবাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। বিকল্প রাস্তা কোথায় হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে পুলিশ। তিনি জানান, কবে থেকে ওই সেতু সারানোর কাজ করা যাবে, তা-ও ঠিক করা হবে সমীক্ষার পরেই।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.