হার্ডওয়্যার শিল্পে লগ্নি টানার লক্ষ্যে ছ’মাস আগেই ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার তৈরির জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই সূত্রে মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্প সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্টও কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত ও আর্থিক সাহায্য হাতে পাওয়ার জন্য জরুরি সেই রিপোর্ট এখনও পাঠাতে পারেনি রাজ্য। কারণ প্রশাসনিক জটে বার বার হোঁচট খাচ্ছে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগের কাজ। যে-উপদেষ্টা সংস্থা গোটা পরিকল্পনা তৈরি করে দেবে।
নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতে সফটওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার শিল্পেও জোর দিয়েছে রাজ্য। সেই সূত্রেই কেন্দ্রের ‘ইলেকট্রনিক সিস্টেম অ্যান্ড ডিজাইন ম্যানুফ্যাকচারিং’ নীতির আওতায় হার্ডওয়্যারে বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যে নৈহাটি ও ফলতায় দু’টি ‘ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার’ বা শিল্পগুচ্ছ তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রকল্প-পরিকল্পনা তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব উপদেষ্টা সংস্থাকে দেওয়ার কথা। তারাই তৈরি করবে প্রকল্প সংক্রান্ত রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা দিতে হবে। প্রকল্পের খুঁটিনাটি বিচার করেই কেন্দ্র সবুজ সঙ্কেত দেবে ও টাকা বরাদ্দ করবে। প্রাথমিক পর্বেই আটকে রয়েছে এ রাজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দু’বার দরপত্র চাওয়ার পরেও পছন্দ মতো উপদেষ্টা সংস্থা পাওয়া যায়নি। এ বার তৃতীয় বার দরপত্র চাইছে রাজ্য। গত আর্থিক বছরের শেষেই এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যাপারে আশা করেছিল তথ্যপ্রযুক্তি দফতর।
কেন্দ্রীয় নীতি অনুযায়ী এই শিল্পগুচ্ছ তৈরির জন্য ৫০ থেকে ১০০ একর জমি রাজ্যকে জোগাড় করতে হবে। ক্লাস্টার প্রতি ৫০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ছাড়াও শরিক হিসেবে থাকবে একটি বণিকসভা। প্রাথমিক অর্থ জোগাবে কেন্দ্র। জমি দেবে রাজ্য। এবং বিনিয়োগকারী নিয়ে আসার দায়িত্বে থাকবে বণিকসভা। গবেষণার জন্য থাকবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
সফটওয়্যারে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ভুল হার্ডওয়্যার শিল্পের ক্ষেত্রে শুধরে নিতে চেষ্টা করেছিল বাম সরকার। আর বর্তমান সরকার আর এক ধাপ এগিয়ে হার্ডওয়্যার শিল্পের তালিকায় নিয়ে এসেছে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্রপাতিও। এমনকী নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও এই শিল্পকে বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। তবুও এই শিল্পে দেশের বাজারে রাজ্যের ভাগ প্রায় নেই বললেই চলে।
কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের শরিক হয়ে সেই ঘাটতি কবে পূরণ করতে পারে রাজ্য, এখন সেটাই দেখার।
উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার জেরে আটকে রয়েছে ই-ওয়েস্ট প্রকল্পও। এই বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ মডেল অনুসরণ করতে চায়। প্রকল্পে বেসরকারি সংস্থার লগ্নি টানতে প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিকল্পনার। উপদেষ্টা সংস্থার হাতে সেই পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বও দেওয়ার কথা। |