‘দ্বন্দ্ব’ যেন মিটতে চাইছে না তৃণমূলের। বিভিন্ন সময় নানা কারণে জেলায় বারে বারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। একই ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় টিকিট না পেয়ে কোথাও জেলা সভাপতি, কোথাও সিউড়ির বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই। শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা থেমে থাকেননি, নিজের নিজের এলাকা নির্দলের হয়ে ভোটে লড়ছেন অনেকে।
উদাহরণ হিসেবে সিউড়ি ১ ও ২ ব্লকের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সিউড়ি ১ ব্লকের মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান শোভা মাল, সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান নবরঞ্জন ঘোষ এবং এই পঞ্চায়েতেরই বিদায়ী উপপ্রধান চক্রধর মাহারা নিজের নিজের এলাকা থেকে নির্দলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শুধু এঁরাই নন, দলীয় টিকিট না পেয়ে জেলার আরও বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে নির্দলে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের বহু বিদায়ী সদস্য থেকে নতুন মুখ। নবরঞ্জন ঘোষ বলেন, “আসলে আমরা হাত তোলা পার্টি নই।
|
সিউড়ি ২ ব্লকে নির্দল প্রার্থীর ভোট প্রচার। —নিজস্ব চিত্র। |
জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম আমাকে ও উপপ্রধানকে দলীয় প্রতীক দেননি। আসলে আমাদের সঙ্গে সিউড়ির বিধায়ক স্বপন ঘোষের সুসম্পর্ক থাকার জন্যই আমাদেরকে প্রতীক দেওয়া হয়নি। তাই হাটজনবাজার (১১ নম্বর সংসদ) থেকে নির্দলে লড়ছি।” ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী করা হয়েছে। আসলে তাঁরা চাইছেন, যত দিন বাঁচবেন তাঁদেরই প্রার্থী ও প্রধান, উপপ্রধান করতে হবে। এটা ঠিক নয়। তাই নতুন মুখ আনা হয়েছে।”
অন্য দিকে, মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান শোভা মালকে প্রার্থী না করায় আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর দাবি, “অনুব্রতবাবু ও ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহের অনুগামী হওয়ায় দলীয় প্রতীক দেননি স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ লোকজন।” তিনি বলেন, “আগের বারও নিজের এলাকা জীবধরপুর সংসদ থেকে জিতেছিলাম। এ বারও ওই সংসদে দাঁড়িয়েছি।” দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বর্ণশঙ্করবাবু।
শোভা মাল বা নবরঞ্জন ঘোষদের মতো না হলেও সাঁইথিয়ার দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান বিনোদ বাগদির টিকিট না পাওয়ার বিষয়টি খুব কাকতালীয়। কারণ, এলাকায় বিনোদবাবু ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের ঘনিষ্ঠ। আবার ব্লক সভাপতি অনুব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হলেও তিনি টিকিট পাননি। এ প্রসঙ্গে ব্লক সভাপতি বলেন, “নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, জেতা প্রার্থীদের প্রার্থী করা। কিন্তু স্থানীয় নেতৃত্বের আপত্তিতে বিনোদবাবুকে প্রতীক দেওয়া যায়নি।” তিনি আরও বলেন, “এর পরেও বিনোদবাবু যদি দলবিরোধী কাজ করে নিজের প্রচার করেন, তা হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।”
এ ছাড়াও সিউড়ি ১ ব্লকের আলুন্দা পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্যা রাকিয়া বিবি, সদস্য মরণ বায়েন, চার বারের পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ আমিনও নির্দলের হয়ে লড়ছেন। এই কেন্দ্রে ১৩টি আসনের মধ্যে ৭-৮টিতেই তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। টিকিট পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “নিজের ইচ্ছায় কে কোথায় দাঁড়িয়েছে বলতে পারব না। আমরা দলীয় প্রর্থীর সঙ্গে আছি।” প্রায় একই মন্তব্য করেছেন সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। তাঁর কথায়, “ঘনিষ্ঠ বলে কোনও ব্যাপার নয়। দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করছি। তাঁদের সঙ্গে রয়েছি।” |