পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই প্রার্খী দেয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই আসনটিতে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ভোটের ফল প্রকাশের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দুবরাজপুরের বালিজুড়ি এলাকার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে বাসিন্দাদের। কারণ, দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থী রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ময়দানে দলের ‘অঞ্চল সভাপতি’ বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় নির্দলের হয়ে লড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে কার হয়ে প্রচারে নামবেন তা নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটা বিভাজন ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টিকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র বলেন, “দলের প্রতীক যিনি পেয়েছেন, তাঁর হয়েই সকলে প্রচার করবেন এবং তিনিই জয়ী হবেন। যিনি নির্দলে প্রার্থী হয়েছেন তিনি তৃণমূল সমর্থক বা নেতা যেই হন না কেন। খড়-কুটোর মতো উড়ে যাবেন।”
তবে এই পরিস্থিতি হল কেন?
|
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়। |
রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী— চণ্ডীপুর, মঙ্গলপুর হালসোত এবং কামালপুর এই চারটি গ্রামের তিন হাজারেরও বেশি ভোটার নিয়ে বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের ছয় নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনটি রয়েছে। জেলার অন্যান্য জায়গার মতো এই অঞ্চালেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই কারণেই জোড়া ফুল প্রতীকে ওই আসনটির জন্য দু’জনই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। সিপিএমেরও এক প্রার্থী ওই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সিপিএম প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দুই তৃণমূল প্রার্থীই অবশিষ্ট থাকেন। বিপ্লববাবুর অকপট কথা, “দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল করি। আশা করেছিলাম প্রতীক পাব। পাইনি! তাই নির্দল।” বিপ্লববাবুর আরও দাবি, “এই এলাকায় তৃণমূলের যে সংগঠন সেটা তৈরি করতে প্রচুর লড়াই করেছি। তাঁদের কথা ভেবেই লড়াই। প্রচার থেকে সমর্থন সব সময় ওঁরা আমার সঙ্গেই রয়েছেন। সেই কারণে আমিই জিতব।” অন্য দিকে, দলের প্রতীক পাওয়া রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেতার ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। বললেন, “আমিও দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করছি। দল যেহেতু আমার পাশে, তখন না জেতার কারণ নেই।”
দুই তৃণমূল প্রার্থীর লড়াইয়ে সমস্যা হবে না? উত্তরে রবীনবাবু বলেন, “কোনও সমস্যা হবে না। একবার ব্যক্তিগত ভাবে বিপ্লববাবুকে লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি তা মানেননি।” বিপ্লববাবু অবশ্য সে কথা স্বীকার করেননি। তাঁর দাবি, “কেউই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। বরং তাচ্ছিল্যই করেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলে ভেবে দেখতাম। কিন্তু এখন আর সময় নেই।”
আর দলের কিছু কর্মী সমর্থকদের কথায়, “যাঁর হাত ধরে দলে এসেছি তাঁর বিরুদ্ধেই প্রচার করতে হচ্ছে। এটা খারাপ লাগলেও সবার আগে দল। সেই কথাটাই মাথায় রাখছি।” |