সাত বছর পার
জল পৌঁছে দিতে ব্যর্থ রামপুরহাট পুরসভা
বাড়িতেই পরিস্রুত পানীয় জল পাবেন। এই উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া প্রকল্প এখনও বাস্তব রূপ পায়নি। কবে যে হবে চাতক পুরবাসীর এখনও জানা নেই। এরই মধ্যে অসম্পূর্ণ জলপ্রকল্পের মাধ্যমে রামপুরহাট পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডের রাস্তায় অপরিকল্পিত ও অবৈধ ভাবে জলের স্ট্যান্ড পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা সঞ্জীব মল্লিক। স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড।
রামপুরহাট পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ড। দীর্ঘদিন ধরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের মাধ্যমে পরিস্রুত পানীয় জল শহরের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছয়। সম্প্রতি পুরসভাকে জল সরবরাহের জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তর করে জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগ। এখনও পর্যন্ত কাগজে-কলমে পুরসভায় ৫১২টি পরিবারকে পানীয় জলের ‘হাউস কানেকশন’ দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০০৬ সালে ৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার একটি নতুন জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের অর্ধেক হয়ে গেল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এই সাত বছরে তিন বার বোর্ডের ক্ষমতা বদল হয়েছে। প্রথমে সিপিএম। মাঝে অনাস্থায় কংগ্রেস এবং বর্তমানে তৃণমূল ক্ষমতাসীন।
নতুন জলের ট্যাঙ্ক। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
কেবলমাত্র ক্ষমতায় থেকে গিয়েছেন তিনটি রাজনৈতিক দলের পুরপ্রধানরা। অথচ পুরবাসীর চাহিদা পূরণ এখনও হয়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার ১০,০০০ পরিবারকে নতুন সংযোগের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। সে জন্য ২০০৬ সালে নতুন জল প্রকল্পের মাধ্যমে দু’টি নতুন ওভারহেড ট্যাঙ্ক, দু’টি নতুন পাম্প হাউস তৈরি করে পুরসভার (৪/৫/৬/৭/৮/৯/১৫/১৬ ওয়ার্ড) আটটি ওয়ার্ডে নতুন করে পাইপ লাইন বসিয়ে বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি পুরনো দু’টি রিজার্ভারের মাধ্যমে (১/২/৩/১৪/১৭/১০/১১/১২/১৩) ন’টি ওয়ার্ডে পাইপ লাইনের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ জুড়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তখন পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। ২০০৮ সালে অনাস্থায় ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। পুরপ্রধান হন সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সঞ্জীব মল্লিকের দাবি, “বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন জল প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করে ছিল। পরবর্তীতে তিন বছর ক্ষমতায় বিরোধীরা। নতুন জল প্রকল্পের মাধ্যমে এখনও ১৭টি ওয়ার্ডে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারল না।” তাঁর অভিযোগ, “২০১২ সালে রাজ্য অর্থ দফতর নতুন জল প্রকল্পের জন্য তিন কোটি টাকা এবং পুরনো দু’টি রিজার্ভার মেরামতির জন্য আরও ৯ লক্ষ টাকা দিলেও কোনও কাজই বাস্তবায়িত হয়নি। জল প্রকল্পের প্রায় ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের বেতন-সহ অন্যান্য কাজে ব্যয় করেছে।” পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০,০০০ পুরবাসীকে হাউস কানেকশন দিয়ে জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে যদি রাস্তার কানেকশন বাড়িয়ে দেওয়া হয় তা হলে দু’টি নতুন রিজার্ভারের মাধ্যমে ৪২ কিলোমিটার পাইপ লাইনে কী ভাবে ১০,০০০ পুরবাসীকে জলের সংযোগ দেবে?” উপ-পুরপ্রধান অনিন্দ্যকুমার সাহার জবাব, “আগে জল প্রকল্পের উদ্বোধন হোক। তার পরে কী হবে, কী হবে না দেখা যাবে।” পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি অবশ্য দাবি, “নতুন জল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার মুখে। আশা করা যায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া যাবে। তার আগে পাইপ লাইন ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য কয়েকটি ওয়ার্ডে রাস্তায় জলের স্ট্যান্ড পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।”
এ দিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে জল প্রকল্পের উদ্বোধন হবে কি না সেখানেও সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, পুরসভার বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকার উপরে। এই অবস্থায় নতুন ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি বিদ্যুৎ দফতরকে ভাবনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরের সহকারী বাস্তুকার সূর্যপ্রকাশ সিংহ অবশ্য বলেন, “টাকা যাই বাকি থাক, পুরবাসীর জলের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। তারা চিন্তা-ভাবনা করছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.