পঞ্চায়েত ভোটের আগে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে সিপিএমের লোকজনের হাতে আক্রান্ত হল পুলিশ। অথচ তার পরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশ-প্রশাসন ও তৃণমূলের গোপন আঁতাঁতের অভিযোগ তুললেন দলের নেতারা।
ভোটে হাঙ্গামা বাধাতে বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে সিপিএম সমর্থকেরা অস্ত্র মজুত করছে বলে খবর ছিল পুলিশের কাছে। বুধবার সকালে সেখানে অভিযান চালাতে গেলে পাল্টা হামলা হয়। পেরেক লাগানো লাঠি থেকে এক মহিলা কনস্টেবলকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০টি বোমা ও চারটি গুলি উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে দু’জন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। নানা ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সমর্থক, এমনকী প্রার্থীদেরও ভোটের আগে জেলে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। বলগনা গ্রামে পুলিশ নিজেই অস্ত্র নিয়ে গিয়েছিল।” তাঁদের আশঙ্কা, “পুলিশ-প্রশাসন ও তৃণমূলের মধ্যে গোপন সমঝোতা হয়েছে। কোনও স্পর্শকাতর বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে না। ভোটের দিন রাজ্য পুলিশের মদতে বুথে-বুথে লাগামছাড়া সন্ত্রাস চালাবে তৃণমূল।” |
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনী হাতে পাওয়ার পরেই আমরা বলতে পারব, কোন বুথে কাদের মোতায়েন করা হবে। এ ব্যাপারে কে কী বলেছেন, তা নিয়ে আমার মন্তব্য করার দরকার নেই।” পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আদালত ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনেই আমরা বুথে-বুথে প্রহরার ব্যবস্থা করছি। সব ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা দেখতে ব্লকে-ব্লকে পরিদর্শকেরা রয়েছেন। আমরা যদি নির্দেশ অমান্য করি, তাঁরাই নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠাবেন।”
পুলিশ জানায়, এ দিন বলগনায় সুখচাঁদ ওরফে খোকন পাত্র এবং পিন্টু মাঝি ওরফে বুধন নামে দু’জন অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়ে। বলগনা গ্রামে খোকনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি পাইপগান ও তিন রাউন্ড গুলি মিলেছে। রান্নাঘরের পাশ থেকে মিলেছে ১০টি তাজা বোমা। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করে ভ্যানে তোলার সময় তার স্ত্রী ও সে নিজে চিৎকার শুরু করে। এলাকার সিপিএম কর্মীরা ছুটে আসেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি বেধে যায়। সেই সময়েই সিপিএমের এক মহিলা সমর্থক পেরেক লাগানো লাঠি দিয়ে এক মহিলা কনস্টেবলকে মারতে যান বলে অভিযোগ। আইসি আটকাতে গেলে তাঁর হাতে লাঠি লাগে।
পুলিশের দাবি, সিপিএমের সমর্থকেরা খোকনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করছিলেন। তখনই পুলিশ পিন্টু ওরফে বুধনকে ধরে। তার কোমরে গোঁজা ছিল গুলি ভরা পাইপগান। আইসি বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব, দুই ধৃতকে নিয়ে চলে আসার চেষ্টা করছিলাম। কারণ পুলিশের জিপ ঘিরে ধরেছিল ওই সমর্থকেরা। দেরি করলে তারা ধৃতদের ছিনিয়ে নিত। তবে যে মহিলা হামলা চালিয়েছেন তাঁকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।”
এ দিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে সিপিএমের অমলবাবু অবশ্য অভিযোগ করেন, “তৃণমূলকে ভোটে জেতাতে মরিয়া পুলিশ-প্রাশাসন। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আমাদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ চালাচ্ছে তৃণমূল। গলসি, রায়না, মঙ্গলকোট, খণ্ডঘোষ, আউশগ্রাম ও ভাতারে তৃণমূলের লাগামছাড়া সন্ত্রাসে আমাদের কর্মীরা তো বটেই, প্রার্থীরাও ঘরছাড়া। আমাদের মিছিল-মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এটা কি আইনের শাসন?” তৃণমূলের রাজ্য নেতা তথা অন্যতম জেলা পরিদর্শক অলোক দাস পাল্টা বলেন, “সিপিএম নেতারা ক্ষমতা হারিয়ে উন্মাদে পরিণত হয়েছেন। চিন্তা নেই! মানুষই এর প্রতিকার করবেন।” |