কালনার কালীনগর
কবাডির আঁতুড়ে প্রচারে কবাডিই
বাজি প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড়ের
ভাগীরথীর ভাঙন, খারাপ রাস্তায় চলাচলের সমস্যা তো আছেই। তবে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের কালীনগর গ্রামকে কবাডিতে তার হারানো সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপর কালীনগর গ্রামের বাসিন্দা ইনসান আলি। তিনি এ বছর ওই পঞ্চায়েতের ২৫০ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী। ভোটে জিতলে এক সময়ে কবাডি গ্রাম হিসেবে খ্যাত এই গ্রামে কবাডির পুরনো সুনাম ফিরিয়ে আনবেন, এমনই প্রতিশ্রুতি ৬৯ বছর বয়সী এই প্রাক্তন জাতীয় তারকার।
কালীনগর গ্রামে ঢুকতে গেলে ভাগীরথী পেরোতে হয়। ভাগীরথীর ভাঙন এখানে অন্যতম একটি সমস্যা। তবে এর মধ্যেও ইনসান আলির কাছে গ্রামবাসীদের চাহিদা, গ্রামের এক সময়ের হারিয়ে যাওয়া খেলা কবাডিকে ফিরিয়ে দিতে হবে স্ব-মহিমায়। আর এটাই হল ইনসান আলির এ বারের ভোটের তুরুপের টেক্কা। কালীনগর গ্রামে কবাডির প্রবেশ ইনসান আলির হাত ধরেই। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ নেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত টানা জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৯ সালে ইন্দো-বাংলাদেশে যে কবাডি টেস্ট হয়, সেই প্রতিযোগিতাতেও জাতীয় দলের ভাইস ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে বাংলা দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন ইনসান আলি। সে বার জাতীয় প্রতিযোগিতায় রানার্স হয় বাংলা। ইনসান আলির খ্যাতি শুধুমাত্র খেলোয়াড় হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি সাফল্য পেয়েছিলেন। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া রেলের মহিলা কবাডি দলের প্রশিক্ষক থাকাকালীন টানা ১১ বার নিজের দলকে জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন করেন। আর সাম্প্রতিক কালে মাস দু’য়েক আগে গোয়াতে জাতীয় মহিলা বিচ কবাডিতে ফাইনালে পঞ্জাবের কাছে হেরে যায় বাংলার মেয়েরা। এই মহিলা দলের প্রশিক্ষক ছিলেন ইনসান আলিই।
প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী ইনসান আলি। —নিজস্ব চিত্র।
একই পরিবার থেকে কবাডিতে খ্যাতি পেয়েছেন ইনসান আলির ভাইপোও। আনজার আলির কবাডিতে হাতেখড়ি কাকার হাত ধরেই। ১৯৯০ সালে বেজিং এশিয়াডে সোনা জেতে ভারতীয় দল। এই দলের সদস্য ছিলেন আনজার আলি। কবাডিতে অর্জুন পুরস্কার পাওয়া বিশ্বজিৎ পালিত, রমা সরকার, মনিকা নাগ-সহ অনেকেরই প্রশিক্ষক ছিলেন ইনসান আলি। এর পর ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কালীনগর গ্রাম থেকে জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রায় ২৫ জন যুবক যোগ দেন। রাজ্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এ গ্রামেরই শ’খানেক যুবক। গ্রামের অনেকে চাকরি পান কবাডি খেলার দৌলতেই। তবে ১৯৯৫ সালের পর থেকে কবাডিতে নতুন প্রজন্ম উৎসাহ হারাতে থাকে। কালীনগর গ্রামে এক রকম কবাডি খেলার চল উঠে যেতে থাকে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইনসান আলিকে প্রার্থী করার ব্যাপারে উদ্যোগ দেখান তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। ইনসান আলির আর এক ভাইপো হাবিব শেখ এখন বাংলা দলের প্রশিক্ষক। তাঁর কথায়, “কাকাই প্রথম দেখান কবাডি খেলে বড় হওয়া যায়। সম্মান মেলে। তাঁর দেখানো পথ ধরেই গ্রামের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে কবাডিতে অংশ নিয়েছে। ভোটে দাঁড়ানোয় কবাডির প্রাক্তন খেলোয়াড়েরাও কাকার হয়ে প্রচারে নেমেছেন। আশা করছি, ভোটে কাকা বড় ব্যবধানে জয়লাভ করবেন।”
আর ইনসান আলির কথায়, “আমি এখনও মনে করি কালীনগরের ছেলেদের ভালো প্রশিক্ষণ দিলে উৎকৃষ্ট মানের কবাডি খেলোয়াড় পাওয়া যাবে। কাছাকাছি ধাত্রীগ্রাম এলাকায় সে উদ্দেশ্যে একটি প্রশিক্ষণ শিবির খোলার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া জয় পেলে গ্রামের ভাঙন নিয়েও লড়াই করব।” প্রাক্তন খেলোয়াড়ের হয়ে প্রচারে নেমেছেন বহু প্রাক্তন কবাডি খেলোয়াড়ও। জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলে আসা লালচাঁদ শেখ, ইব্রাহিম শেখদের দাবি, প্রচারে কবাডির উন্নয়নের কথাই শুধু নয়, জোর দেওয়া হচ্ছে সার্বিক উন্নয়নের দিকেও।
ইনসান আলির বিপক্ষে প্রার্থী সিপিএমের মোহনলাল শেখ। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই আসন থেকে সিপিএম প্রার্থী এরশাদ শেখ মাত্র ১ ভোটে জিতেছিলেন। তাঁরা প্রচারে গ্রামের নানা সমস্যার ব্যাপারে বলছেন, দাবি সিপিএমের। তৃণমূল প্রার্থীর প্রতি সিপিএমের কটাক্ষ, মানুষ ভোট দিতে আসবেন কবাডি খেলোয়াড়কে দেখে নয়। এলাকার উন্নয়ন দেখে। আসন্ন নির্বাচনে এটাই দেখার, মানুষ কাকে নির্বাচিত করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.