বহু আবেদনেও হয়নি রাস্তা। পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় হাতবদল হয়েছে, কিন্তু সমাধান রয়ে গিয়েছে তিমিরেই। এ বার আর আর্জি নয়, রাস্তা না মেলায় কোনও রাজনৈতিক দলকেই এলাকায় প্রচার করতে দিচ্ছেন না কাটোয়ার সুনিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীর আশা, এমন প্রতিবাদে হয়তো টনক নড়বে কর্তাদের।
২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত কাটোয়া ১ ব্লকের কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। ওই বছর ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। কিন্তু সুনিয়া গ্রামে রাস্তার অবস্থার কোনও হেরফের হয়নি। তাই সুনিয়ার বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অন্তত এ বার প্রচার করতে দেওয়া হবে না কাউকেই। পঞ্চায়েত ভোটের পাঁচ দিন আগে পর্যন্ত মিছিল-স্লোগান বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাসি-হাসি মুখে ‘ভোটটা দিন, ঝকঝকে রাস্তা দেব’ গোছের দৃশ্য নেই সেখানে। কাটোয়া শহর থেকে কিলোমিটার সাতেক দূরে অজয় নদ ঘেঁষা এই গ্রামে এ বার একটি জায়গায় রাস্তার দাবি জানিয়ে দেওয়াল লিখন করেছেন গ্রামবাসী। |
সুনিয়া গ্রামে মোট ৫৭টি পরিবারের শ’তিনেক মানুষের বাস। তাঁদের মধ্যে ভোটার ১৬৮ জন। তাঁদের আবার চার কিলোমিটার দূরে যতীনপুর গ্রামে গিয়ে ভোট দিতে হয়। এই খবর জানার পরে কাটোয়া ১ ব্লকের পর্যবেক্ষক ব্লক প্রশাসনকে ভর্ৎসনা করেছে বলেও প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর। ওই গ্রামের বাসিন্দা রিনা হাজরা, শরদিন্দু হাজরারা বলেন, “গ্রামের এক জন তৃণমূলে দাঁড়িয়েছেন। তিনিও ভোট চাইতে লজ্জা পাচ্ছেন। বাইরের প্রার্থীরা আর মুখ দেখায় কী করে!” তরুণ হাজরা, লতিকা হাজরাদের বক্তব্য, “দল নয়, উন্নয়ন চাই। তাই আমরা আমাদের মতো করে প্রতিবাদ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
অজয় নদ দিয়ে ঘেরা এই গ্রামের তিন দিকে জল। শুধু দক্ষিণ দিক ধরে যাতায়াত করা যায়। কাটোয়া কাশীরাম দাস সেতু প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা থেকে দু’কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা বলতে স্রেফ আলপথ। এই আলপথই গ্রামের জীবনকাঠি। গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ হাজরা বলেন, “আমার নাতির অন্নপ্রাশন। চেয়ার-টেবিল-সহ অন্য সরঞ্জাম ডেকরেটরের কর্মীদের মাথায় করে আলপথ দিয়ে হেঁটে নিয়ে যেতে হয়েছে।”
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ডুলির মতো দেখতে বড় বড় ঝুড়ি রয়েছে। বয়স্ক মানুষজনকে তাতে চাপিয়ে আলপথ পার করতে হয়। রাস্তার জন্য বর্ষায় গ্রামের পড়ুয়ারা দূরের কোশিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে সমস্যায় পড়ে। কৃষ্ণ হাজরা, রক্ষাকর হাজরারা বলে, “আলপথ দিয়ে স্কুলে যাওয়া যায় না। কাদায় গা মাখামাখি হয়ে যায় যে।” এলাকাবাসীর ক্ষোভ, ফি বছর বন্যায় ডুবে যাওয়া এই গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। মেঘনাদ হাজরা, শীলা হাজরাদের কথায়, “আমাদের গ্রামে ভোটার কম। তাই রাজনৈতিক দলগুলি কেউ ঘুরেও দেখে না।”
রাস্তার সমস্যার জন্য ওই গ্রামে প্রচার করতে পারেনি তারা, স্বীকার করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সদস্য তথা কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদ্য প্রাক্তন সভাপতি বংশীধর ঘোষের দাবি, “আমরা ওই গ্রামে যাতায়াতের জন্য রাস্তা করেছিলাম। কিন্তু বন্যার জলে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের সদ্য প্রাক্তন প্রধান হরি পণ্ডিতের বক্তব্য, “জমি সমস্যার জন্য রাস্তা তৈরি করা যাচ্ছে না। বিডিও-কে এলাকায় নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি দেখিয়েছি।” কাটোয়া ১ বিডিও আশিসকুমার বিশ্বাস স্বীকার করেন, ওই গ্রামে যাতায়াতের জন্য কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই।
আশ্বাসের পরে কাজের কাজ হয়নি। প্রতিশ্রুতি বর্ষণের সুযোগ না দিয়ে কাজ হবে, অপেক্ষায় সুনিয়া। |