সংসারের রাশ শাশুড়ির হাতে। সেখানে তিনি যা বলেন, যেমনটা চালান, তেমনই চলে সবাই, এমনকী বৌমাও। কিন্তু বাড়ির বাইরে অর্থাৎ ভোটের ময়দানে ছবিটা আলাদা। সেখানে শাশুড়িকে এত চিলতে জমি ছাড়তে নারাজ বৌমা। তবে শাশুড়িও টক্কর দিতে কম যান না। আর তাতেই জমে উঠেছে শাশুড়ি-বৌমা ভোটযুদ্ধ। সালানপুর ব্লকের রূপনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের এই লড়াইয়ে সরগরম আশপাশের এলাকাও।
শাশুড়ি লীলা দাস, রূপনারায়ণপুরে পঞ্চায়েতে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী, আর বৌমা ঝুমকাদেবী সিপিএমের। তবে এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার ছাপ সংসারে বিশেষ পড়েনি। সকাল থেকে যে যার হেঁশেল সামলে, সংসারে খুঁটিনাটি কাজ সেরে দু’জনেই দিব্যি কাজের ফাঁকে খোসগল্পও জুড়ছেন। পারলে একে অপরের কাজে সাহায্যও করছেন। কিন্তু বিকেল হলেই ব্যাস। তখন তাঁরা শুধুই প্রতিপক্ষ। তখন শাশুড়ি, বৌমা যে যাঁর দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঝাণ্ডা কাঁধে বেরিয়ে পড়চেন প্রচারে। বাড়ি বাড়ি প্রচার, পথসভা, মিছিলের শেষে বাড়ি ফিরতে রাত। পরের দিন সকাল থেকে আবার একই সংসার, আর তাঁরা ফের শুধুই শাশুড়ি-বৌমা।
দু’জনের প্রচারের ধরণ প্রায় একইরকম হলেও বক্তব্য সর্ম্পূণ আলাদা। এঁরা কেউই দলের নেতাদের শেখানো বুলি কাকাতুয়ার মতো আওড়াচ্ছেন না। বরং রাজ্যের সাম্প্রতিকতম ঘটনাবলী তুলে ধরে মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্যে আসর জমিয়ে দিয়েছেন দু’জনেই। |
এলাকায় ভোটার রয়েছে চার হাজারের কিছু বেশি। তাই ভোট চাইতে গিয়ে কে কোথায় কি বলে আসছেন সহজেই সে সব অন্যের কানে পৌঁছে যাচ্ছে। চোখা চোখা তৈরি জবাবও ছুটে যাচ্ছে একে অপরের দিকে। এলাকার বাস্তুহারা পরিবারগুলির জন্য পাট্টা বিলির দাবি, জল, নিকাশি, রাস্তার বেহাল দশা থেকে শুরু করে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ, সবই উঠে আসছে প্রচারে। রাজ্যের সামগ্রিক হাল-হকিকত বলতে গিয়ে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে বৌমা ঝুমকাদেবী বলেন, “রূপনারায়ণপুরকে কামদুনি করতে না চাইলে তৃণমূলকে একটিও ভোট দেওয়া যাবে না। ওরা জিতলে রসাতলে যাবে মেয়েদের স্বাধীনতা ও সম্ভ্রম।” উত্তর তৈরি শাশুড়ি লীলাদেবীরও। তাঁর দাবি, “৩৪ বছরে বহু নারীর মর্যাদাহানী করেছে সিপিএম। আর কামদুনির ঘটনা এমন কিছুই নয়। ছোটখাট বিষয় নিয়ে সিপিএম বেশি বাড়াবাড়ি করছে।” রূপনারায়ণপুর পঞ্চায়েতটি কংগ্রেসের দখলে থাকায় সেই অর্থে শাশুড়ি-বউমা-দু’জনেই বিরোধী। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে আক্রমণের প্রশ্নে তাঁদের দু’জনের বক্তব্যও একইরকম।
কিন্তু আপনাদের অনেক নেতা মন্ত্রী তো বলেছেন, সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না। ঘর করা যাবে না। সম্পর্কও রাখা যাবে না। কেউটে সাপ দেখলে যা করা উচিত সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গেও তাই করা উচিত। তাহলে বউমার সঙ্গে কি সেই ব্যবহারই করবেন? উত্তরে লীলাদেবীর সাফ জবাব, “ওসব নেতা মন্ত্রীর কথা মানি না।” পারিবারিক সম্পর্কের সঙ্গে রাজনীতির তুলনা হবে না। বৌমা ঝুমকাদেবীও সে কথাই মানেন। বললেন, “উনি তো আমাদের মা।”
তবে পারিবারিক আবেগ সরিয়ে রেখে জেতার বিষয়ে প্রত্যয়ী দু’জনেই। ফলাফল কী হবে জানতে চাওয়া হলে ঝুমকাদেবী বলেন, “আমরাই জিতছি, লিখে নিতে পারেন। তৃণমূল গোহারান হারবে।” আবার লীলাদেবী বলেন, “সিপিএমের মুখ পুড়বে এবার। মানুষ আমাদেরই ভরসা করেন।”
এই প্রথমবার ভোটে দাঁড়ালেও একটুও ভয় পাচ্ছেন না ঝুমকাদেবী। নিজের এবং দলের উপর তাঁর অগাধ ভরসা। আর এ নিয়ে পরপর তিনবার এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন লীলাদেবী। আগের দু’বার অবশ্য হেরেছেন। এখন দেখার, সেই হারের হ্যাটট্রিক বজায় থাকে নাকি এবার তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেড়ে!
|