তৃণমূলকে বেগ দিচ্ছেন ব্রাত্য প্রাক্তনেরা
লের জন্মলগ্ন থেকেই সঙ্গে ছিলেন তিনি। ভোটে জিতে দু’বার উপপ্রধান, এক বার প্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন। কিন্তু এ বার তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন অন্ডাল পঞ্চায়েতের শশী চৌবে। দেড় দশক ধরে যে দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এ বার পঞ্চায়েত সমিতির আসন থেকে লড়বেন তার বিরুদ্ধেই।
রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান ছিলেন অভিজিৎ বসু। কিছু দিন আগে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। তাঁর স্ত্রী এ বার পঞ্চায়েতে লড়ছেন কংগ্রেসের টিকিটে।
দক্ষিণখণ্ড পঞ্চায়েতে তৃণমূলের হয়ে দু’বার ভোটে জিতেছেন উত্তম হাজরা। তাঁর আসন এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তিনি দাবি করেছিলেন, টিকিট দেওয়া হোক তাঁর স্ত্রীকে। দল না মানায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তাঁর স্ত্রী। উত্তমবাবু বলছেন, “ভোটে প্রমাণ হবে, আমি প্রকৃত তৃণমূল।”
অন্ডালের নানা পঞ্চায়েতে এ বার এমন উদাহরণের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে কেউ বলছেন, ‘দলে গণতন্ত্র নেই’, কেউ আবার দায়ী করছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, দলের প্রতি আনুগত্যের তুলনায় যাঁদের কাছে টিকিট পাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, দলও তাঁদের কথা ভাবতে নারাজ।
১৯৯৮ সালে ভোটে জিতে উপপ্রধান, ২০০৩ সালে জিতে প্রধান হন শশী চৌবে। ২০০৮ সালে প্রধান পদটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে গেলে তাঁকে উপপ্রধানের দায়িত্বে রাখে তৃণমূল। এ বার পঞ্চায়েতে তাঁর আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় তিনি পঞ্চায়েত সমিতির ১৯ নম্বর আসনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তা না মানায় এই তৃণমূল নেতা অন্ডালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে দলবদল করেন। কংগ্রেসের হয়ে ভোটেও দাঁড়ালেন। শশীবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূলে গণতন্ত্র নেই। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অনুগত না হতে পারলে সম্মান নেই। দল না ছাড়লে দমবন্ধ পরিস্থিতি হচ্ছিল।”
তৃণমূলে থাকাকালীন শশীবাবু দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। রামপ্রসাদপুরের অভিজিৎবাবুও ওই গোষ্ঠীর লোক ছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। অভিজিৎবাবুর দাবি, “দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী কর্মী সম্মেলনে বিদায়ী সদস্যদের প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে বলেছিলেন। ব্লকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা সুযোগসন্ধানীদের টিকিট দিয়েছেন।” তাঁদের মতোই এ বার টিকিট পাননি গত বার তৃণমূল থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য রামপ্রসাদপুরের সমীর চট্টোপাধ্যায়, মদনপুরে সৃজন সীট, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য ঊষা ঘোষ, অন্ডাল পঞ্চায়েতের উত্তম মহান্তিরা।
২০০৮ সালে পঞ্চায়েত সমিতির ১৯ নম্বর আসনে অল্প ভোটে জিতেছিলেন দলে ভি শিবদাসনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল প্রার্থী গীতা লাল। এ বার টিকিট পাননি তিনিও। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন কালোবরণ মণ্ডল, যাঁকে এলাকাবাসী রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের অনুগামী বলে চেনেন। ওই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী শশীবাবুর দাবি, “যোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বের করার জন্য তৃণমূলে কোর কমিটি তৈরি হয়েছিল। তা না করে কমিটির সদস্যেরা নিজেরাই দাঁড়িয়ে পড়লেন।” তাঁর মন্তব্য, “২০০৩-এ কালোবরণ জেলা পরিষদে দাঁড়িয়ে গোহারা হারেন। সে বার আমি জিতে প্রধান হই। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় থেকে আবার দলের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন উনি। ২০১১ বিধানসভা ভোটের পর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। মন্ত্রীই তাঁর হাতেই দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন।”
কালোবরণবাবু অবশ্য বলছেন, “আমিও প্রথম থেকে দলে আছি। কখনও ছেড়ে যাইনি। প্রতিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে কাজ করেছি। এ বার শুধু চেয়েছিলাম, ক্ষমতালোভীরা যেন টিকিট না পায়।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্রের বক্তব্য, “টিকিট বিলিতে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়নি। শশীর জেতা আসন মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁর স্ত্রীকে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। অভিজিৎকে দলবিরোধী কাজের জন্য অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে।” টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যদের তোলা নানা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ভি শিবদাসনও। মন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “যাঁদের কাছে শেষ পর্যন্ত দলের থেকে প্রার্থিপদ বড় হয়েছে, তাঁদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনও ইচ্ছা আমার নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.