হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের মামলার রায় কলেজ-কর্তৃপক্ষের অনুকূলে দেওয়ার জন্য কেউ তাঁকে ফোনে অনুরোধ করেছেন। মঙ্গলবার এ কথা জানিয়ে মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র। মামলার শুনানি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে, এ দিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে তার রায় হওয়ার কথা ছিল।
এ দিন এজলাসে প্রধান বিচারপতি মিশ্র বলেন, “আমার ল্যান্ডফোনে একটি ফোন এসেছিল। আমাকে বলা হয় হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে রায় দিতে।” প্রধান বিচারপতির কথায়, “আমি মনে করি, এ ভাবে আমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। তাই আমি আর মামলাটি আমার এজলাসে রাখছি না। মামলা এখন অন্য বেঞ্চ শুনবে।”
প্রধান বিচারপতির অভিযোগ শুনে এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা হতচকিত হয়ে যান। আতান্তরে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ-কর্তৃপক্ষও। কারণ, এ মরসুমে মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ভর্তির শেষ দিন ধার্য হয়েছে ১৫ জুলাই। এর মধ্যে নতুন বেঞ্চে মামলার নিষ্পত্তি হবে কি না, তা ভেবে কলেজ-কর্তৃপক্ষ যারপরনাই উদ্বিগ্ন।
তাঁদের মতে, মামলার রায়ের উপরেই নির্ভর করছে, হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ এ বছর আদৌ পড়ুয়া ভর্তি করতে পারবে কি না। প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সভাপতি, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ এ দিন বলেন, “আমাদের আসল চিন্তা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। মামলার রায়ের উপরেই তা নির্ভর করছে।”
হলদিয়া মেডিক্যাল নিয়ে বিতর্ক দু’বছর ধরে চলছে। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান সরকার শাসনক্ষমতায় আসার পরে, ২০১১ সালে পর্যায়ক্রমে রাজ্য সরকার, রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) কলেজটির অনুমোদন বাতিল করে। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা হয় হাইকোর্টে। বিচারপতি গিরিশ গুপ্ত অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন। তাঁর রায় চ্যালেঞ্জ করেই এমসিআই হাইকোর্টে আপিল-মামলা করেছিল, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে যার দীর্ঘ শুনানি হয়েছে।
কিন্তু এ দিন চূড়ান্ত রায়ের ঠিক আগে মামলা অন্য ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়ায় আক্ষেপ করেছেন আইনজীবী মহলের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য: এই মুহূর্তে কলকাতা হাইকোর্টে প্রায় চার লক্ষ মামলা জমা রয়েছে। “এ অবস্থায় দীর্ঘ শুনানি হওয়া মামলার ফের শুনানি করে সময় অপচয় করাটা একেবারে বাঞ্ছনীয় নয়।” মন্তব্য এক আইনজীবীর। ওঁদের দাবি: এই মামলাটির জন্যই গত শিক্ষাবর্ষে হলদিয়া মেডিক্যাল ছাত্রভর্তি করতে পারেনি। আইনজীবীদের অনেকে এ-ও বলছেন, কেউ প্রধান বিচারপতিকে ফোন করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তা গুরুতর অপরাধ হিসেবেই গণ্য হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে উনি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু বেঞ্চ পাল্টানোয় মামলাটিকে কার্যত অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেওয়া হল বলে এই মহলের আশঙ্কা।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবীদের একাংশ সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্ত চাওয়া জনস্বার্থ-মামলার প্রসঙ্গও তুলছেন। তাঁরা বলছেন, ওই মামলাটিও প্রায় শেষ মুহূর্তে অন্য বেঞ্চে স্থানান্তরিত করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। তাতে মামলার নিষ্পত্তি হতে এক মাস বাড়তি সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটনার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে মামলা স্থানান্তরের যে যুক্তি প্রধান বিচারপতি দিয়েছেন, তা অনেক বেশি গুরুতর বলে জানাচ্ছেন আইনজীবী মহল। |