সুশান্ত-লক্ষ্মণ সামনে নেই, প্রশ্ন সিপিএমেই
জেল-ফেরত দুই নেতা সুশান্ত ঘোষ ও লক্ষ্মণ শেঠকে নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে সিপিএম!
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে দেখা যাচ্ছে না দুই মেদিনীপুর জেলার দুই নেতাকে। দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে দু’জনকে প্রচারে চেয়ে আবেদন এসেছিল। কিন্তু সিপিএম সূত্রের খবর, দলের রাজ্য নেতৃত্বই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তাঁদের আপাতত প্রচারে না নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন জেলার নেতাদের। এতে আবার সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি নিজেদের দলই দুই নেতাকে দোষী মনে করছে? তা হলে আর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ নিয়ে হইচই করা যায় কী ভাবে?
সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, এ বারের পঞ্চায়েত ভোট অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে লড়তে হচ্ছে। সেই সময়ে দলের ভাবমূর্তির স্বার্থেই ‘বিতর্কিত’ দুই নেতাকে সামনে আনা হয়নি। কিছু জেলা থেকে তাঁদের জন্য আবেদন এলেও এখনও পর্যন্ত সে সব মঞ্জুর করা হয়নি। দলীয় সূত্রের খবর, শাসক দল যাতে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে তাঁদের নিশানা করার নতুন অস্ত্র না পেয়ে যায়, সেই কথা মাথায় রেখেই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন মূলত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ওই মতে আপত্তি করেনি। আবার রাজ্য কমিটিরই একাংশ বলছে, মামলা-মোকদ্দমায় জেরবার আছেন বলেই সুশান্ত-লক্ষ্মণকে পঞ্চায়েতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে আলাদা করে কোনও ‘বার্তা’ নেই।
রাজ্যে পালাবদলের পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার বিধায়ক সুশান্তবাবুকে কঙ্কাল-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। কয়েক মাস জেল হাজতও হয়েছিল তাঁর। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে কয়েক জন তৃণমূল সমর্থকের নিখোঁজের ঘটনায় তার পরে তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণবাবু গ্রেফতার হন। তিনিও মাসদুয়েক হাজতে ছিলেন। আপাতত দু’জনই জামিনে মুক্ত। তবে আদালতের কিছু বিধি-নিষেধ অনুযায়ী, সুশান্ত-লক্ষ্মণ নিজেদের এলাকায় কোনও মিছিল-মিটিং করতে পারবেন না। এই সমস্যার কথা তুলেই সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্য বলছেন, “নিজেদের এলাকায়, যেখানে ওঁদের প্রভাব ভাল, সেখানেই তাঁরা কাজ করতে পারবেন না। ওই দু’টি জেলাতেই আমরা সব চেয়ে বিপদ-সীমায় আছি! মামলা নিয়ে এত সমস্যার মধ্যে অন্যত্র ওঁদের পাঠিয়ে কী লাভ?”
কিন্তু অন্য দিকে ঘটনা হল, সরকারের হাতে গ্রেফতারির পরে দলের নিচু তলার কর্মীদের কাছে ওই দুই নেতারই জনপ্রিয়তা বেড়েছে। জেল থেকে তাঁরা ছাড়া পাওয়ার সময়েও ফুল-মালা নিয়ে হাজির ছিলেন নেতা-কর্মীরা। সিপিএমের জেলার নেতাদের একাংশের বক্তব্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের প্রবল হাওয়ার মধ্যেও গড়বেতায় সুশান্তবাবুর জয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তা ছাড়া, মাওবাদী দমনে সুশান্তবাবুর ভূমিকা দলের পক্ষে সাংগঠনিক স্তরে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। নিচু তলার কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেই পঞ্চায়েতের প্রচারে তাঁর থাকা দরকার ছিল বলে দলের একাংশের মত। আবার নানা অভিযোগ সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুরে লক্ষ্মণবাবুই দলের কর্মীদের কাছে প্রধান সংগঠক হিসাবে পরিচিত। এমনকী, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে তিনি জেলে থাকা সত্ত্বেও তাঁর খাস তালুক হলদিয়ায় পুরসভা দখলে রাখতে পেরেছে বামফ্রন্ট। রাজ্য কমিটির সদস্য, দক্ষিণবঙ্গের এক জেলার নেতার প্রশ্ন, “আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব এক দিকে বলছেন, তৃণমূল সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ওই দুই নেতাকে গ্রেফতার করে হয়রান করছে। শাসক দল তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তাঁদেরকে সামনে রেখেই তো প্রতিহিংসার রাজনীতির কথা বলা যেত! কিন্তু প্রচার অভিযানে সামিল না-করলে উল্টে বার্তা যাচ্ছে, সরকারের অভিযোগের সত্যতাই যেন মেনে নেওয়া হচ্ছে!” প্রসঙ্গত, জেল থেকে বেরোনোর পরে গত নভেম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে সুশান্তবাবু একমাত্র জনসভায় গিয়েছিলেন। আর কোনও জেলায় তিনি প্রকাশ্য কর্মসূচিতে থাকেননি।
দলের মধ্যে যা-ই প্রশ্ন থাক, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়ে থাকতে পারে। সেই কারণেই দুই নেতাকে প্রচারের আলোয় রাখা হয়নি।” তাঁর আরও সংযোজন, “দলের মুখ বদলের একটি প্রক্রিয়া চলছে। এটা তারও অঙ্গ।” তাতেও দলের মধ্যে প্রশ্ন, সম্মেলনে যাঁরা প্রায় নায়কের মর্যাদা পেয়েছিলেন, তাঁরাই আবার মুখ বদলের কোপে?
সামনে আনলেও বিড়ম্বনা। আড়ালে রাখলেও প্রশ্ন। জোড়া নেতাকে নিয়ে উভয় সঙ্কট আলিমুদ্দিনের!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.