নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের প্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাহিনীর ব্যবস্থা করতে গিয়ে কার্যত পুলিশহীন হয়ে পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। রাজ্যে পাঁচ দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্টে এই জেলায় ভোট হবে তৃতীয় দফায়, ১৯ জুলাই। তার আগেই জেলার থানাগুলি থেকে পুলিশকর্মীর সংখ্যা কমতে থাকায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জেলার পুলিশকর্তাদের আশঙ্কা। তাঁদের এই আশঙ্কা যে নেহাতই অমূলক নয়, তার কারণ জেলার দু’টি মহকুমা বগাঁ ও বসিরহাটের বেশিরভাগ অংশই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা। সীমান্ত থাকায় এই দুই মহকুমাতেই গরুপাচার, নারী নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি-সহ অন্যান্য অপরাধও বেশি। ফলে এই অবস্থা স্বাভিকভাবেই চিন্তা বাড়িয়েছে জেলার পুলিশ কর্তাদের।
প্রথম দফায় বাঁকুড়ার নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই সেখানে পাড়ি দিয়েছে এখানকার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট বাদ দিয়ে জেলায় থানার সংখ্যা কুড়ি। প্রতিটি থানাতেই হাতে গোনা পুলিশকর্মী। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সব রকম পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিও সে ভাবেই সামলানোর চেষ্টা করব।
বসিরহাট মহকুমায় থানার সংখ্যা ন’টি। থানাগুলিতে অফিসার, কনস্টেবল সব মিলিয়ে পুলিশকর্মীর সংখ্যা তিনশোর মতো। তার মধ্যে বাঁকুড়ায় চলে গিয়েছেন ২০৫ জন পুলিশকর্মী। থানাগুলির অধীনে থাকা ৩২টি পুলিশ ক্যাম্পে এই মুহূর্তে কোনও পুলিশ কর্মী নেই। সেগুলি বন্ধ। শুধু ক্যাম্পই নয়, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, সরকারি অফিস (যেখানে প্রয়োজন), আদালতেও পুলিশ নেই। বনগাঁ, বারাসত সর্বত্রই একই পরিস্থিতি। বনগাঁ মহকুমায় ৪টি থানা রয়েছে। ওই সব থানায় যতজন পুলিশ রয়েছে, তার ৭০ শতাংশই বাঁকুড়ায় চলে গিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। মহকুমায় যে ১২টি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে তার মধ্যে গাইঘাটার সুটিয়া ক্যাম্প ছাড়া সবকটিই এখন পুলিশহীন। |
বারাসত মহকুমার একটি থানা থেকে ৯০ শতাংশ পুলিশ চলে গিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বারাসতে যে ভাবে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তাতে মহকপমার পুলিশ কর্তারা চিন্তিত। তার উপর এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে তাঁদের চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে ভগবানই ভরসা।”
এ ভাবে থানাগুলির শক্তি কমে যাওয়া কি ধরনের সম্যসা তৈরি হতে পারে?
জেলা পুলিশের একাংশের মতে, চুরি-ডাকাতি বাড়বে। পুলিশ কম থাকায় দুষ্কৃতীরা উৎসাহ পাবে। তা ছাড়া এই সময় কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ, গণ্ডগোল হলে সামাল দেওয়া সমস্যা হতে পারে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী সভায় নেতা-মন্ত্রীরা এলে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রবল সমস্যা হবে। নির্বাচনের আগে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে যে অভিযান চলত, বাধা পড়বে তাতেও। অতীতে দেখা গিয়েছে, নির্বাচনের আগে বনগাঁ, বসিরহাট ইত্যাদি সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়ে। তা বন্ধ করতে পুলিশ এবং বিএসএফ যৌথ অভিযান চালাত। এ বার তাতেও সমস্যা হবে। ইতিমধ্যেই বসিরহাট মহকুমায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মহকুমার এক পুলিশকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে আমাদের পুলিশ ছাড়তেই হয়েছে। এই অবস্থায় যা হওয়ার তা হবে। তবে এই মুহূর্তে মহকুমায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।” |