বারাসতের কামদুনিতে টুম্পা কয়াল ও মৌসুমী কয়ালের বাড়ির সামনে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে। পুলিশি পাহারা ছিল কামদুনিতে ঢোকার মুখে এবং ধর্ষিত ও নিহত কলেজছাত্রীর বাড়ির সামনেও। সোমবার বিকেল থেকে সেই পাহারা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রচুর পুলিশকর্মীর দরকার হচ্ছে। তাই আপাতত কামদুনিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশি পাহারা তুলে নেওয়ার পর থেকে আতঙ্ক বেড়েছে কামদুনির বাসিন্দাদের। গ্রামের মেয়ে ধর্ষিত ও খুন হওয়ার পরে টুম্পা-মৌসুমীরা বারবার পথে নেমেছেন। বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কয়ালপাড়ার সেই মৌসুমী মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে বসে বললেন, “আমরা খুব ভয়ে ভয়ে আছি। পাড়ার মুখে পুলিশের পাহারা থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ছিল। আর তো সেটাও রইল না।” |
কামদুনি থেকে সরছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন স্কুল ছুটির পরে মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন এক অভিভাবক। তিনি বলেন, “ঘোষপাড়ার মুখে রাস্তাতেও টহল দিত পুলিশ। তাই অনেকটাই নিশ্চিন্তে ছিলাম। এ দিন থেকে আবার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ছুটির পরে মেয়েদের আনতে স্কুলের সামনে বসে থাকছেন প্রায় সব অভিভাবকই।” কামদুনির এক বাসিন্দার প্রশ্ন, প্রতিশ্রুতিমতো রাস্তাঘাট হল না। বিদ্যুৎও এল না। তার উপরে আবার পুলিশও তুলে নেওয়া হল। এ বার এলাকার মেয়েরা কোন ভরসায় স্কুল-কলেজে যাবে?
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, এত দিন এলাকায় কোনও নতুন মুখ দেখলে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। মোটরবাইক বা গাড়ির নম্বরও টুকে রাখা হচ্ছিল। কিন্তু পুলিশি টহল উঠে যেতেই ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। মোটরবাইক নিয়ে কামদুনিতে দিনভর সদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছে কয়েক জন অচেনা যুবক। গ্রামবাসীরা তাদের পরিচয় জানার সাহস দেখাননি। মোটরবাইকের শব্দ শুনে সিঁটিয়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছেন গ্রামের মহিলারা।
এক রাতেই কামদুনি যেন ফিরে গিয়েছে সেই আগের কামদুনিতে। টহলদারি উঠিয়ে নেওয়া হল কেন?
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোটে ডিউটি পড়ায় পুলিশের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাই সাময়িক ভাবে কয়েক জন পুলিশকে কামদুনি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য সন্তুষ্ট করতে পারছে না গ্রামবাসীদের। এ দিন দুপুরে বাসিন্দারা তাঁদের আতঙ্কের কথা বারবার জানাতে থাকেন জেলার পুলিশকর্তাদের। পরে কয়ালপাড়ার সামনে দু’জন মহিলা পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করে জেলা পুলিশ। বাসিন্দাদের অনুযোগ, ওই দু’জন মহিলা পুলিশ থাকা না-থাকা সমান।
এই অবস্থায় প্রশাসনের উপরে আর ভরসা রাখতে পারছেন না কামদুনির বাসিন্দারা। ১২ জুলাই কামদুনির কয়েক জন বাসিন্দার দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা। কামদুনি কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত দাবি করা ছাড়াও এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানাতে চাইছেন গ্রামবাসীরা। রাষ্ট্রপতির কাছে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, গ্রামবাসীরা মঙ্গলবার রাতে তা নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। ধর্ষিতার পরিবার ছাড়া কারা দিল্লি যাবেন, সেটাও এ দিনের আলোচনায় ঠিক হয়েছে বলে জানান তাঁরা। |