কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের সঙ্গে সইফুল আলি নামে এক দুষ্কৃতীই যুক্ত বলে বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পেশ করা চার্জশিটে জানিয়েছিল সিআইডি। এ বার ওই চার্জশিট সংশোধন করে রফিক ইসলাম, আমিন আলি ও নুর আলি নামে আরও তিন জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ আনতে চলেছে তারা। তবে রফিককে এখনও ধরতে পারেননি সিআইডি-র তদন্তকারীরা।
প্রথম চার্জশিটে বলা হয়েছিল, অন্য যে-সব অভিযুক্তের নাম এফআইআরে আছে, তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ধর্ষণ ও খুনের পরে। সেই চার্জশিট নিয়ে রাজ্য জুড়ে সমালোচনা মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটলেন সিআইডি-কর্তারা। সংশোধিত চার্জশিটে অন্য তিন জনের নাম সংযোজনের উদ্যোগ তারই প্রমাণ।
প্রথম চার্জশিটের সঙ্গে সংশোধিত চার্জশিটের এতটা ফারাক হচ্ছে কেন?
এক সিআইডি-কর্তা বলেন, “সইফুল গোপন জবানবন্দিতে সব কথা স্বীকার করেছে। তাই ধর্ষণ ও খুনে তার একার যুক্ত থাকার কথাই বলা হয়েছিল চার্জশিটে। এখন ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। তাতে ঘটনার সময় অন্যদেরও উপস্থিত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাই গণধর্ষণ ও খুনের মামলার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তাদেরও।”
সিআইডি সূত্রের খবর, রাজ্য ফরেন্সিকের রিপোর্ট তাদের হাতে এসেছে সোমবার। ওই দিনই সেটি দাখিল করা হয় বারাসত আদালতে। তদন্তকারীরা জানান, রাজ্য ফরেন্সিক পরীক্ষাগারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধর্ষিতার শরীরে ও ঘটনাস্থলে বীর্য পাওয়া গিয়েছে। তার সঙ্গে অভিযুক্তদের বীর্য মিলিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানো হয়েছে।
শুধু সেই পরীক্ষাই নয়। বাকি রয়েছে সেরোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষাও। ওই পরীক্ষায় ধর্ষিতার শরীর থেকে পাওয়া রক্তের নমুনার সঙ্গে অভিযুক্তদের রক্তের নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে। সেই সব রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আবার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হবে বলে সিআইডি-কর্তারা এ দিন জানান। ডিআইজি (সিআইডি) বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এখনও কিছু পরীক্ষা বাকি রয়েছে।’’
ঘটনার পরে রফিক ইসলাম, আনসার আলি, আমিন আলি ও নুর আলি নামে চার জনের নামে এফআইআর করেছিল মৃতার পরিবার। বারাসত আদালতে সিআইডি-র পেশ করা চার্জশিটে অবশ্য ওই চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ আনা হয়নি। এখন তিন জনকে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত করা হচ্ছে কী ভাবে?
চার্জশিটের অসঙ্গতি নিয়ে সিআইডি-কে ভর্ৎসনা করে আদালত। পরে সিআইডি-র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে বিক্ষোভ শুরু হয় কামদুনিতে। সিআইডি-র কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। এক দিকে আদালত এবং অন্য দিকে রাজ্য জুড়ে প্রবল সমালোচনা এই জোড়া চাপের মুখে পড়েই শেষ পর্যন্ত চার্জশিটে অসঙ্গতি দূর করতে উদ্যোগী হয়েছেন সিআইডি-কর্তারা। যদিও সিআইডি সূত্রে বলা হয়েছে, ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে গণধর্ষণ কাণ্ডের অনেক নতুন তথ্য হাতে এসেছে। তার ভিত্তিতেই আরও তিন জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের মামলা করা হচ্ছে।
ধর্ষিত ও নিহত ছাত্রীর পরিবার এবং কামদুনির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে সিআইডি-র অফিসারেরা মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে যান। ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা বলেন, “কেউ আমাদের উপরে কোনও রকম চাপ দেয়নি। আমরাও চাই, দোষীদের শাস্তি হোক।” গোয়েন্দাদের বক্তব্যে অবশ্য আশ্বস্ত হতে পারেননি ওই ছাত্রীর আত্মীয়স্বজন। গোয়েন্দারা ওই পরিবারকে পরোক্ষে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। তাঁরা নাকি ছাত্রীটির মা-বাবাকে বলেন, ‘ছেলেদের ধৈর্য ধরতে, সংযত হতে বলুন। সব জায়গায় এত কথা বলছে কেন? বারণ করুন।’ ধর্ষিতার মা তাঁদের বলেন, “দোষীর ফাঁসি কবে হবে? সেটাই আগে বলুন।”
সিআইডি অফিসারেরা জানান, বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলেই দোষীরা সাজা পাবে। নিহতের পরিবারকে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে ডিআইজি গোয়েল বলেন, ‘‘হুমকির কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
সিআইডি অফিসারেরা এ দিন তদন্তে সহায়তা ও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন। কেন এমন চার্জশিট দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলে বাসিন্দারা বলেন, “সিআইডি-র উপরে আমাদের আর ভরসা নেই। সিবিআই তদন্তের দাবিতেই আমরা দিল্লি যাব।” সিআইডি অফিসারেরা তাঁদের বলেন, “অভিযুক্তেরা ছাড় পাবে না। শাস্তি হবেই। ১২ জুলাই যে-চার্জশিট দেওয়া হবে, তাতে বাকি তিন জনের নামও থাকবে।”
|