|
|
|
|
অন্য কেশপুর |
আগে-পিছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, শেষলগ্নে প্রচার সিপিএমের |
বরুণ দে • কেশপুর |
আগে-পিছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরা। সঙ্গীন উঁচিয়ে সদা সতর্ক জওয়ান। সেই ভরসাতেই শেষবেলায় কেশপুরে প্রচার সারল সিপিএম।
সেই কেশপুরে যেখানে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম ছিল শেষ কথা। যেখানে ২০১১ বিধানসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী জিতলেও মঙ্গলবার সকালে সিপিএম কর্মীদের নিয়ে দু’টি প্রচার গাড়ি বেরোয়। একটি ঘোরে আনন্দপুর থানার বিভিন্ন এলাকায়। অন্যটি কেশপুর থানা এলাকা ঘোরে। মাইক ফুঁকে দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। নির্বাচনের জন্য কেশপুরে ২ কোম্পানি বিএসএফ এসেছে। সেই বিএসএফের প্রহরাতেই শেষ বেলায় চরকির মতো ঘুরেছে সিপিএমের প্রচার গাড়ি। এ দিন কেশপুর সদরে মিছিলও করে সিপিএম। তাতে জনা পঞ্চাশেক লোক ছিল। এরা সকলেই ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থক বলে সিপিএম সূত্রে খবর।
এ বারের নির্বাচনে কেশপুর এলাকায় পঞ্চায়েতের ত্রি-স্তরে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রেও সিপিএমের শোচনীয় দশা। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ মিলিয়ে সিপিএম প্রার্থী সাকুল্যে ৬ জন। জেলা পরিষদে ৩ জন, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১ এবং এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ২ জন। এই অবস্থার জন্য শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। আর শোনাচ্ছেন অন্য সমীকরণের কথা। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “সন্ত্রাসের জন্য সব আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। দলের প্রতীকে ৬ জন প্রার্থী রয়েছে ঠিকই, তবে আমাদের আরও প্রার্থী রয়েছে।” মানে? বিধায়কের জবাব, “বেশ কিছু এলাকায় বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রগতিশীল প্রার্থী রয়েছেন। আমরা ওঁদেরও ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।” |
|
দু’দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি নিয়ে সিপিএমের প্রচার। মঙ্গলবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।
|
মঙ্গলবার সকালে পার্টি অফিসে ছিলেন বিধায়ক রামেশ্বরবাবু, দলের কেশপুর জোনাল সম্পাদক আহমেদ আলি প্রমুখ। আহমেদ আলি একটি মামলায় জড়িয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। মাস খানেক আগে জামিন পেয়েছেন। তিনিও বলেন, “সর্বত্র কী চলছে, সকলেই দেখছেন। মানুষ এই সন্ত্রাসের জবাব দেবেন।”
বরাবর ‘লালদুর্গ’ ছিল কেশপুর। আর তার ভরকেন্দ্র ছিল সিপিএমের জোনাল অফিস ‘জামশেদ আলি ভবন’। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, কেশপুর জুড়ে যাবতীয় সন্ত্রাস চালানো হত এই পার্টি অফিস থেকেই। জামশেদ আলি ভবনে এখন আঁধার। কিছু ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থক সেখানে থাকেন বটে। গোপন মিটিংও হয়। তবে তার বাইরে পার্টির আর কোনও কার্যকলাপ নেই। কঙ্কাল-কাণ্ডের মতো নানা মামলায় নাম জড়িয়ে তরুণ রায়, এন্তাজ আলি, আহমেদ আলির মতো কেশপুরের এক সময়ের দাপুটে সিপিএম নেতারাও ঘরছাড়া। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে পালাবদলের পরে প্রভাব বেড়েছে তৃণমূলের। তবে রাজনৈতিক মেরুকরণ হলেও কেশপুরে একাধিপত্যের রাজনীতি একই থেকে গিয়েছে। তারই পরিণাম, এ বার নির্বাচনের আগেই ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩টিতে চালকের আসনে তৃণমূল। অর্থাৎ, ওই ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে যে সংখ্যক বিরোধী প্রার্থী রয়েছেন, তাঁরা যদি সকলে জেতেন, তাহলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করতে অসুবিধে হবে না। কারণ, অর্ধেকেরও বেশি আসন শাসক দলের ঝুলিতে। দলীয় নেতৃত্বও তা মানছেন।
তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, “কোথায় সন্ত্রাস হয়নি। মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই সংখ্যার সমীকরণে ভোটের আগেই এই পরিস্থিতি।”
তাঁর কথায়, “সিপিএম নিজের কবর নিজেই খুঁড়েছে। এতো অত্যাচার-সন্ত্রাস মানুষ ভুলে যাবে? মানুষের মধ্যে কত ক্ষোভ-যন্ত্রণা রয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। ওরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। আসলে মানুষ আর ওদের সঙ্গে নেই!” |
|
|
|
|
|