প্রশ্নের মুখে দুর্গাপুর পুরসভা
শহরের বর্জ্য ঢালা হল স্টেডিয়ামে
কাল পৌনে ৮টা। হঠাৎই দেখা গেল আবর্জনা বোঝাই সারি সারি পুরসভার গাড়ি হাজির হয়েছে দুর্গাপুর শহরের ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে। সেই স্টেডিয়াম যেখানে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের প্রদর্শনী ম্যাচ হয়, প্রতি বছর আবাসিক শিবির করতে এসে গা ঘামায় মোহনবাগান দল। মঙ্গলবার সেখানেই পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি পরিমল অগস্তি নেতৃত্বে স্টেডিয়ামের বর্ধিত অংশে গাড়িগুলি খালি করল সারা শহরের বর্জ্য। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঠঠাও শেষে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে গেল। শহরবাসীর অনেকেই এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সরব হয়েছে সিপিএমও। পরিমলবাবুর অবশ্য দাবি, স্টেডিয়ামের সম্প্রসারিত ওই অংশটি বেশ নীচু। আবর্জনা ফেলে তা ভরাট করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। তাই ওখানে ফেলা হল। অন্যদিকে স্টেডিয়ামের নীচু অংশ ভরাট করার কাজও হয়ে গেল।” তাঁর প্রতিশ্রুতি, জেসিবি মেশিন দিয়ে আবর্জনার স্তুপ সমান করে দেওয়া হবে।
দুর্গাপুরের ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে তখল চলছে জঞ্জাল ফেলার কাজ। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুর শহরের আবর্জনা এতদিন নিয়ে গিয়ে ফেলা হতো শঙ্করপুরের কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে। পরে তা প্রক্রিয়াকরণ করে সার, বিশেষ ধরণের ইট ইত্যাদি তৈরির ব্যবস্থাও ছিল কেন্দ্রটিতে। কিন্তু ২৮ জুন থেকে কেন্দ্রটি বন্ধ। সেখানকার কর্মীদের অভিযোগ, দু’মাস ধরে তাঁরা বেতন পাননি, নিয়মিত পিএফ কাটা হলেও তা জমা করা হয় না। এমনকী ৮ ঘণ্টার জায়গায় গড়ে ১২ ঘন্টা ধরে কাজ করতে হয়, কিন্তু সেজন্য অতিরিক্ত কোনও অর্থও তাঁরা পান না। এরই প্রতিবাদে তাঁরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় ৬ জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রটি কবে চালু হবে সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থাটি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ সংস্থাটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও ঠুকে দিয়েছে।
এ দিকে, কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় শহরের আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে অব্যবস্থা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, আবর্জনা বোঝাই লরি শহরের নির্জন কোনও স্থানে নিয়ে গিয়ে মর্জিমাফিক খালি করে দিচ্ছেন পুরসভার সাফাই কর্মীরা। এ নিয়ে বচসার জেরে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডিসিএল কলোনির কাছে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে প্রহৃতও হয়েছেন পুরসভার সাফাই কর্মীরা। ফলে শহরের আনাচে কানাচে জমছে জঞ্জালের ডাঁই।
মঙ্গলবার পুরসভার গাড়িতে করে এই আবর্জনা নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, পুরসভার কর্মীরা ছাড়া কাউকে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের অম্বুজা কলোনির একাধিক বাসিন্দা বলেন, “এ তো পুরো তুঘলকি কান্ড! জায়গা নেই বলে সবুজ স্টেডিয়ামের ভিতরে আবর্জনার স্তুপ বানিয়ে দেওয়া হবে?” ৩০ জুলাই দুর্গাপুরে মোহনবাগানের আবাসিক শিবিরও শুরু হওয়ার কথা। শহরবাসীর প্রশ্ন, এই অবস্থায় মাঠ ব্যবহার করতে এসে খেলোয়াড়দের সমস্যায় পড়তে হবে না? শহরবাসীর সম্মান কি অক্ষুণ্ণ থাকবে?
পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী জানান, এটা পুরসভার নিজস্ব স্টেডিয়াম। স্টেডিয়াম গড়ার জন্য যখন এডিডিএ বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভাকে জমি দেয় তখন জায়গাটি ছিল সম্পূর্ণ পাথুরে। সেই পাথর কেটে ধাপে ধাপে ফ্লাই অ্যাশ, বালি, নুড়ি, মাটি দিয়ে চারফুট পুরু আস্তরণ গড়া হয়েছিল। তার উপরে তৈরি হয় খেলার মাঠ। সে সময় পুরসভা যা খরচ করেছিল তার থেকে বেশি সহযোগিতা করেছিল দুর্গাপুরের বিভিন্ন শিল্প সংস্থা। তিনি বলেন, “দুর্গাপুরের সেই সম্পদকে আবর্জনা ফেলে ধ্বংস করা মেনে নেওয়া যায় না। আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে সেটা নিশ্চয়ই একটি সমস্যা। সমাধানও জরুরি। আমাদের দিক থেকে কোনও সাহায্য লাগলে করব। কিন্তু ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে আবর্জনা ফেলার কথা ভাবা যায় না।” তবে মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, আবর্জনা ফেলার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। একেকদিন একেক জায়গায় ফেলা হচ্ছে। সব জায়গা থেকেই আপত্তি উঠছে। তিনি জানান, আগে এডিডিএ একবার বাঁশড়ার কাছে ইসিএলের পরিত্যক্ত জায়গা দেখে দেয়। কিন্তু সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে গাড়ি আটকে দেয়। পুলিশ নিয়ে গিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়। মেয়র বলেন, “স্থায়ী সমাধানের জন্য এডিডিএ’র কাছে আর্জি জানিয়েছি। কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.